১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৩:৪০

তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে, পানিবন্দী ১০ হাজার পরিবার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে, পানিবন্দী ১০ হাজার পরিবার

প্রবল বর্ষণ ও হঠাৎ করেই উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের প্রায় ১০ হাজার পরিবার।

বুধবার দুপুরে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হু-হু করে পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা অববাহিকার বসতবাড়ি ও আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। পরিবারগুলো বসতঘর ছেড়ে গাইডবান রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে।

লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে নতুন করে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাতে ফলে ঘর থেকে বের হতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, উজানে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীতে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সোমবার তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ডালিয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও মঙ্গলবার রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পায়। রাত ৯টায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বুধবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালমনিহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তার ডান তীরের দক্ষিণ ধুবণী এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। তিস্তার চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়া চরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে তিস্তার পানি কমতে পারে।

এর আগে, গত ১১ জুলাই তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে এবং ১৩ জুলাই সেটা সর্বোচ্চ ৯০ সেন্টিমিটার উপরে উঠে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত সেখানে বিপদসীমা বরাবর পানি প্রবাহিত হলেও ১২ জুলাই থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে আবারও ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেলে ভয়াভয় বন্যা দেখা দেয়। এতে লালমনিরহাটে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজানের পানি নেমে গিয়ে বন্যার পরিস্থির উন্নতি হলেও মঙ্গলবার বিকেল থেকে আবারও নতুন করে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে তিস্তা ও ধরলার পাড়ে। আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় পরিবারগুলো স্থানীয় গাইডবান, স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও সড়কে আশ্রায় নিয়ে বসবাস করছেন। এতে দেখা দিয়েছি খাদ্য ও ত্রাণ সংকট। একই সঙ্গে লালমনিরহাট জেলায় আবারও ভয়াবহ বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে।

পানিবন্দী রয়েছে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, পাকশের সুন্দর, বাঘের চর, সির্ন্দুরনা, পাঠান বাড়ি, হলদি বাড়ী, ডাউয়াবাড়ি, বিছন দই, গড্ডীমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, পাটিকাপাড়া, পশ্চিম হলদি বাড়ি, চর গড্ডীমারী, ধুবনী, সিঙ্গীমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, গোর্বধন, কুটির পার ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর প্রায় ৩০টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবার। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজ। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দী মানুষের। 

লালমনিরহাটর জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক প্রস্তুত রয়েছে। 
বন্যার্ত পরিবারগুলোর জন্য এ পর্যন্ত ২৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর