আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ার পরেও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে এ বিষয়ে অবগত হলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা।
দণ্ডিত ব্যক্তি হলেন- বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। আদালতের ‘রায়’ কে ব্যক্তিগত মামলার রায় উল্লেখ্য করে বলেন মামলার বাদীর সঙ্গে আপোষ করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সদর উপজেলার চাদমুহা হরিপুর এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলামে কাছে থেকে ৩ লাখ টাকা ধার দিয়ে পরিশোধ করেনি। তার বিপরীতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে ব্যাংক এশিয়া বগুড়ার শাখার একটি চেক প্রদান করে মেহেদী হাসান। ওই বছরের জুন মাসের ১২ তারিখে পাওনাদার চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকটি ডিজঅনার করে।
পরবর্তীতে পাওনাদার রফিকুল ইসলাম লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে টাকা না পেয়ে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শুনানি শেষে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২১ জুলাই আদালত এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
মামলায় রায়ে বলা হয়, এন.আই এ্যাক্ট'র (Negotiable Instruments Act) ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করায় সাজা ও জরিমানা প্রদান করা হয়।
বগুড়ার যুগ্ম-দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন চলতি বছরের ২১ জুলাই এ রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি জুলাই মাসের ২৮ তারিখে মেহেদী হাসান চেকের দাবিকৃত টাকার অর্ধেক চালানমূল্যে ব্যাংকে জমা দিয়ে ৬ আগস্টে জামিন নিয়েছেন।
এদিকে, দণ্ডিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা চলমান রয়েছে আদালতে। সদর উপজেলার চাদমুহা হরিপুর এলাকার মৃত মহিনী রঞ্জন সরকারের ছেলে পলাশ সরকার ৩ লাখ টাকার দাবিকে একই ধারাতে মামলা করেছেন।
অন্যদিকে, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চাকরিতে বহাল তবিয়তে থাকায় উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সচেতন মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এছাড়া অনেকেরই অভিযোগ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন মেহেদী হাসান।
টাকার বিনিময়ে প্রকল্প পাইয়ে দেয়াসহ চাকরির তদবির করেন এই মেহেদী এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা যাতায়াতকারী বিভিন্ন ব্যক্তি।
দণ্ডিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান তার বিরুদ্ধে রায় ও মামলা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব মামলার বাদীর সঙ্গে আপোষ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণে লেনদেন হয়েছে, সে কারণে মামলা, তার সঙ্গে চাকরির কোন সম্পর্ক নেই।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বগুড়া অঞ্চলের সাবেক জিপি ও সাবেক এমপি অ্যাড. শাজাহান আলী তালুকদার জানান, ফৌজদারি মামলায় কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দণ্ড হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান, সরকারি চাকরিজীবী কোন মামলায় যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়, তা অবগত হলে তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত