নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার সেই নারী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। রবিবার নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ সামসউদদীন খালেদের আদালতে তার জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতে সেই নারী জানান, সেই রাতের (৩০ ডিসেম্বর) খাবার খেয়ে তিনিসহ পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘরের বাহির থেকে আসামি ছালাউদ্দিনের ডাকে তার ঘুম ভেঙে যায়। তখন তিনি কে জিজ্ঞেস করলে ছালাউদ্দিন বলেন ‘আমি ছালাউদ্দিন’।
সেই নারী বলেন, 'আমি ঘুম থেকে জেগে বাতি জ্বালাই। এরপর আমি ও আমার স্বামী মিলে দরজা খুলে দেই। এ সময় ছালাউদ্দিন, সোহেল, আবু, হেঞ্জু মাঝি, বেচু, স্বপন, চৌধুরী ঘরে ঢুকে। আর রুহুল আমিন মেম্বারসহ (বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা) অন্য আসামিরা বাহিরে ছিল। আসামিরা ঘরে ঢুকেই প্রথমে আমার মেয়ের কক্ষে গিয়ে তাকে নষ্ট (ধর্ষণ) করার চেষ্টা করে। এ সময় আমরা তাদের হাত-পা ধরলে তাকে ছেড়ে দিয়ে আমার চার সন্তান ও স্বামীকে বেঁধে ফেলে। এরপর আমাকে টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাহিরে নিয়ে যায়। মুখ বাঁধার পর আসামিরা টেনে ঘরের পশ্চিম পাশে পুকুরের পূর্ব পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে একের পর এক আসামি আমাকে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে আসামি বেচু বলে জবাই করে পুকুরে ফেলে দে। স্বপন বলে জবাই করিছ না মার। তখন সোহেল, বেচু গাছের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আমার ডান হাত ভেঙে দেন। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বেঁচে থাকব, আপনাদের সাথে কথা বলবো, স্বামী সন্তানের মুখ দেখব তা কখনো মনে করিনি।
ঘটনার পরের দিন সকালে ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একাধিক সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করা হয়। কিন্তু আসামিরা সিএনজি আসতে দেয়নি। পরে মাইজদী থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাকে জেলা সদরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আদালতকে ওই নারী বলেছেন, 'আসামিদের সঙ্গে পূর্বের কোনো বিরোধ ছিল না।'
জেরার এক পর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশীদ হাওলাদার নির্যাতনের শিকার নারীকে ‘দুর বেডি’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এ সময় আদালত আইনজীবীকে ভাষার ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেন। তাৎক্ষণিক আইনজীবী ‘সরি’ বলেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা