লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক একমাত্র মহাসড়কটি খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের কারণে এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। লালনিরহাট শহর থেকে বুড়িমারী স্থল বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১ শত ১৭ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে উচু নিচু, আর বড় বড় গর্তে ভরে গেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এ দিকে পাটগ্রাম উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় গত দুই মাস আগে স্থানীয়রা রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রতিবাদ করে মহাসড়কের উপরে ধানের চারা রোপন করেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও রাস্তা সংস্কার হয়নি। এই দুই মাসেই মহাসড়কের উপরে লাগানো ধান গাছে ধান বেড়িয়েছে। এমন ঘটনায় এলাকা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ট্রাক ড্রাইভার আলিবর রহমান (৩৫) বলছেন, উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ চললেও লালমনিরহাট-বুড়িমারি মহাসড়ক তার ব্যতিক্রম। স্থানীয়রা এই সড়কের মরণ দশার কারণে ধান লাগিয়েছেন, সেখানে ধানের শীষও বেড়িয়েছে। আমরা এই রাস্তাটির জন্য অনেক বার প্রতিবাদ করেছি কাজ হয়নি।
ওই এলাকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারনে এলাকার লোকজন ধান লাগিয়ে প্রতিবাদ করছেন। ধান শীষ বের হলেও রাস্তা ঠিক হল না!
জানা গেছে, দেশের অন্যতম স্থলবন্দর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক এবং ভারত-ভুটান-নেপালের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ঢাকার পথে যাওয়া-আসায় সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাট বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়ক। কিন্তু ত্রি-দেশীয় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দরে আমদানি রফতানি পণ্য পরিবহনে প্রায় একশত কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এ মহাসড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিম্নমানের সংস্কার কাজ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করায় মহাসড়কটির সহস্রাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে পড়ে প্রায়সময় বড় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী-পথচারীরা। রাস্তায় প্রায় বিকল হচ্ছে পন্যবাহী ট্রাক। গর্তে পড়ে একটি ট্রাক বিকল হলে কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে স্থলবন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
পুরো জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে চলা এ মহাসড়কটির পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট-১) অংশ চলাচলের জন্য কিছুটা ভালো থাকলেও (কালীগঞ্জ-আদিতমারী-২) অংশটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত (লালমনিরহাট-৩) আসনের অংশটিরও একই অবস্থা। যদিও একই বরাদ্দে গত অর্থ বছরে পুরো মহাসড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। এরপরও আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার অংশের প্রতি মাসে সংস্কারের নামে জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ সচল রেখেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
ট্রাক ড্রাইভার মুকুল বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে গেলেই ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কখনো ট্রাক উল্টে মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রামগামী মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশে সড়ক প্রস্থস্তকরণ ও সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো মহাসড়ক সংস্কার করার মতো কোনো বরাদ্দ নেই।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) বখতিয়ার আলম বলেন, সড়কের পাশে উঁচু মার্কেট ও ভারী যানবাহনে কারণে মহাসড়কটি স্থায়ী হচ্ছে না। গত জুন মাসে মহাসড়কটির পুরো অংশ সংস্কার করায় নতুন করে সংস্কার করার কোনো বরাদ্দ নেই। সওজ-এর নিজস্ব তহবিল থেকে মাঝে মধ্যে গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে। বরাদ্দ না থাকায় আপাত কিছু করা যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল