২০ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:১০

জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম, খবর ফাঁস করলেন দুই সহোদর!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম, খবর ফাঁস করলেন দুই সহোদর!

অভিযুক্ত মো. আলমগীর হোসেন হিরু

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভাতাসহ সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে তার এই প্রতারণা ফাঁস করেছেন তার দুই ভাই। সনদ বাতিলসহ সকল সুযোগ-সুবিধা বন্ধের জন্য ওই ব্যক্তির দুই সহোদর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। 

বিতর্কিত ওই ব্যক্তির নাম মো. আলমগীর হোসেন হিরু। তিনি মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের মৃত হাকিম উদ্দিনের ছেলে।  

জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত হাকিম উদ্দিনের চার ছেলের মধ্যে আলমগীর হোসেন হিরু সবার ছোট। হিরুর বয়স যখন ৭ তখন তাদের বাবা মারা যান। পরে বড় তিন ভাই তাকে লালন-পালন করে বড় করেছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হিরুর বয়স ১০/১২ বছর ছিল।

বড় দুই ভাইয়ের দাবি আলমগীর হোসেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে সরকারি ভাতা নিচ্ছেন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় তার এক ছেলে পুলিশে ও মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হয়েছে। অপর ছেলেও একইভাবে পুলিশে চাকরি দেয়ার চেষ্টা করছেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে আলমগীর হোসেন হিরুর দুই সহোদর আব্দুল বাছেদ মুন্সী (৭৮) ও বাবলু মিয়া ওরফে বাবু মিয়া (৭৫) গত ১৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিতর্কিত করবে তা নিজেদের বিবেক মেনে নিতে পারেনি বলে মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা দাবি করে বলেন, প্রতারণা করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতিটি বাড়ি থেকেই এভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। অভিযোগে তদন্ত সাপেক্ষে তারা আলমগীর হোসেন হিরুর মুক্তিযোদ্ধা সনদ/গেজেট স্থগিত করে সম্মানি ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে 'মুক্তিযোদ্ধা' আলমগীর হোসেন হিরু মির্জাপুর মুক্তিযোদ্ধা পৌর কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া তিনি যে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তা তার বড় ভাইয়েরা জানেন না বলেও জানান। তবে কমান্ডার মোহাম্মদ আলী 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে আলমগীর হোসেন হিরুকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।   

এ ব্যাপারে একই গ্রামের বাসিন্দা ও মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, আলমগীর হোসেন হিরু যে একজন মুক্তিযোদ্ধা ২০১০ সালের জুনে মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচনের ভোটার তালিকা দেখে আমি তা প্রথম জানতে পারি। 

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, যেহেতু পরিবার থেকে মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর