দিন-দুপুরে এভাবেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে পথচারীর দিকে। আর নিত্য নৈমিত্তিক চিৎকার চেচাঁমেচিতে নির্ঘুম রাত কাটে পুরো পরিবারের। তার মুখয়ব জুড়ে রয়েছে অনুরোধের দু'টি চোখ। অব্যক্ত কণ্ঠে আর মায়াভরা দু'টি চোখে আবেদন অন্তত একটাই, একবার যদি কেউ বাঁধনটা খুলে দিত। তাহলে সে দৌড়ে গিয়ে খেলা করত সহপাঠীদের সাথে আর মিশে যেত মায়ের সাথে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার নিজধারা গ্রামে দেখা মেলে রশিতে বাধা ১৪ বছর বয়সী কিশোরী স্মৃতি আক্তারের। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ৫ বছর ধরে রশিতে বেঁধে রেখেছে স্মৃতির পরিবার। দীর্ঘ সময় হাতে-পায়ে বেঁধে রাখায় দেখা দিয়েছে দগদগে ঘা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, স্মৃতি ছোটবেলায় থেকে সে একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছিল। সাত বছর বয়সে তার টাইফয়েড জ্বর হয়। কিন্তু জ্বরের পরই সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবসাদ তাকে গ্রাস করে। জন্মের কিছুই দিন পর বাবার কাছ থেকে মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ঠিক তখন থেকেই স্মৃতির দেখভালের পুরো দায়িত্বটা মায়ের কাধে ভর করে। জন্মদাতা পিতা রফিকুল ইসলামও তার দায়িত্ব নিতে অপারগ।
অভাবের তাড়নায় স্মৃতিকে শেষ আশ্রয়স্থল নানী কাছের রেখে ঢাকায় চলে যান মা। মায়ের অনুপস্থিতিতে মানসিক অবস্থা বিকৃতি ঘটে। মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পর আর্থিক অনটনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা।
স্বজনদের দাবি, অভাবের সংসারে নিজের উর্পাজিত অর্থ থেকে চিকিৎসা করালেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই রশি দিয়ে আটকে রেখেছেন। বেঁধে না রাখলে দিক-বিদিক ছুটোছুটি করে অজানা স্থানে চলে যায়। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের ক্ষতি সাধন করে। পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে মা মিনারা বেগমের। পুরোপুরিভাবে সুস্থ করে তুলতে পরিবারের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারিভাবে চিকিৎসা করানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা মিনারা বেগম বলেন, নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে। নিজ অসহায়ত্বের কারণে তার আর হয়ে উঠেনি। এলাকার মেম্বারকে (ইউপি সদস্য) অনেক বলেছি একটা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার জন্য।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আঃ হেকিম জানান, প্রতিবন্ধী তালিকায় কার্ড পাওয়ার ব্যাপারে কিছু কাগজ সংগ্রহ করতে বলেছিলাম তার পরিবারকে। প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ না করতে পারায় প্রতিবন্ধী কার্ডটি করা সম্ভব হয়নি।
স্মৃতিকে সহযোগিতার ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলাদেশ প্রতিদিন কে জানান, অফিস কর্মী পাঠিয়ে জরিপ পূর্বক এই অর্থ বৎসরে সরকারি ভাতায় অর্ন্তভূক্তি করা হবে। সাময়িকভাবে রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে অর্থ সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ