৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৮:৫৬
হত্যাকাণ্ডের সন্দেহ পুলিশের

বরিশালে একই পরিবারের ৩ জনের লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে একই পরিবারের ৩ জনের লাশ উদ্ধার

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর এলাকার এক কুয়েত প্রবাসীর বাড়ি থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে বানারীপাড়া থানা পুলিশ ওই ৩ জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করেন। তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করলেও কেন এবং কারা এই নৃশংসতা ঘটিয়েছেন তা জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। 

নিহতরা হলেন- কুয়েত প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম (৭৫), ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) এবং খালোতো ভাই ভ্যান চালক মো. ইউসুফ (৩২)। এর মধ্যে শফিকুল গত ৩ দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং ইউসুফ মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে রাত্রীযাপন করতেন।  

১১ বছর ধরে কুয়েত প্রবাসে থাকা হাফেজ আব্দুর রব সেখানকার একটি মসজিদের ইমামতিত্ব করছেন। রবের স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু দুই সন্তান ইফাদ জাহান (৯) এবং নূরজাহান ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াশোনা করে। শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই বাসায় ছিলেন মিসরাত ও তার দুই শিশু সন্তান, শ্বাশুড়ি, ভাতিজী চাখার কলেজের এইচএসসি’র প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার, রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই মো. ইউসুফ। ওই রাতে নাতি আছিয়ার সাথে একই কক্ষে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মরিয়ম। 

শনিবার ভোর ৫টার দিকে আছিয়া ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে বিছানায় না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে বেলকনী গিয়ে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার ডাক চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে বাসার মধ্যে আরেকটি কক্ষে রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলমের এবং বাড়ির সামনে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় ইউসুফের পা বাঁধা লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩টি মরদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করে।

এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে গৃহকর্তী মিশরাত জাহান মিশু বলেন, গ্রামের কারোর সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। দুর্বৃত্তরা তার কক্ষের আলমিরা থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে দাবি করলেও তিনি কিছুই টের পাননি বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর সন্তানসহ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মিশু। 

প্রবাসী রবের ভায়রা হারুন সিকদার বলেন, নিহত শফিকুলের সাথে তার ছোট ভাই শহীদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। এ নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে একাধিকবার সংঘাতও হয়। ৩ দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শফিকুল তার কাছে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই ঘটনার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে সন্দেহ করে অভিযুক্তদের দৃস্টান্তমূলক বিচার চান তিনি। 

স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মাহমুদ জানান, আব্দুর রবের পাকা ঘরের সকল দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো। কোন গ্রিলও কাটা কিংবা ভাঙ্গা নেই। ডাকাতির কোন আলামতও তেমন দেখা যায়নি। বিষয়টি রহস্যে ঘেরা বলে মনে করেন স্থানীয়রা। 

এদিকে একই বাড়িতে ৩টি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রাকিব এবং পিবিআই ও সিআইডি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আলামত সংগ্রহ করেন। 

পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ওই বাসার ভেতর থেকে সব দরজা-জানালা আটকানো ছিলো। গৃহকর্তীর বক্তব্য অনুযায়ী তার আলমিরা থেকে একটি বা দুটি স্বর্ণের চেইন খোয়া গেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। নিহত ৩ জনের নাক এবং কান থেকে রক্ত ঝড়ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে কোন আঘাত করে তাদের ৩ জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ অভিযুক্তদের সনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সুপার জানান।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর