গাজীপুরের শ্রীপুরে সর্বোচ্চ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আইয়ুব খানের মার্শাল 'ল' এর প্রশংসা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন সোমবার কলেজের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ওই আইনের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন।
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ''আপনারা ছাত্রদের উৎসাহিত করেন না। ছাত্রদের ধরে রাখেন না। স্বাধীনতা পেয়ে যখন তখন কলেজের বাইরে চলে যান। আসলে আমাদের এই দেশে উচিৎ ছিল আইয়ুব খানের মার্শাল 'ল'। যদিও তা নয়। আজকে যদি আইয়ুব খানের শাসন যত্রতত্র থাকত তাহলে আপনারা এসব করতে পারতেন না। আমি দেখেছি, যেমনি মানে না পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে তেমনি মানে না শ্রীপুর কলেজের শিক্ষকরা আমাকে।'' পরে তিনি তার ব্যক্তিগত আরও বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
এ বক্তব্যের পরপরই সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকরা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী এমন একটি বক্তব্য শুধু কলেজের ভাবমূর্তি বা শিক্ষকদের সম্মান ক্ষুণ্ণ করেনি, একটি দেশের বিজয়ের ইতিহাসকে অপমাণিত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ওই শিক্ষকের রাজনৈতিক অতীত স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া আর কিছুই নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা বলেন, একাধিক সিনিয়র শিক্ষক থাকার পরও নানাভাবে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন কলেজের প্রশাসনিক কাজ ও সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। অথচ সাধারণ শিক্ষকরা নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন। কোনো শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি নিশ্চিত করা কলেজ শিক্ষকদের কাজ নয়। কলেজটিও নতুন নয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে প্রতিষ্ঠিত। ১০ বছর আগে থেকে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস কোর্স ছাড়াও ১০টি বিষয়ে অনার্স এবং চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। তিনি তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা নীতি শিক্ষকদের ওপর বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
আইয়ুব খানের মার্শাল 'ল' এর সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমীন বলেন, আমি বলেছি আইয়ুব খানের শাসনটাই উত্তম ছিল, সবাই মানত। শিক্ষকরা মাসে দুইদিন এসে বেতন নিয়ে যায়। কলেজে আসলেও ক্লাশ নেয় না। তারা স্বার্থে আঘাত লাগলে অনেক কিছুই বলে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজের বর্তমান সভাপতি শেখ শামসুল আরেফীন সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়ার আমি কেউ না। কলেজটি যেহেতু এখন সরকারি হয়েছে সেহেতু সরকারি নিয়মে আমি সভাপতি। আমি কলেজের দাপ্তরিক বিষয়ে সম্পর্কিত না। কে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন বা করেন না তা কলেজ থেকেই জানতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল