হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক সাদা বামন নক্ষত্রকে (White dwarf – ছোট নক্ষত্রের শেষ অবস্থা) পর্যবেক্ষণ করেছেন। দেখা গেছে, এটি প্লুটোর মতো বরফমণ্ডলীয় একটি গ্রহকে নিজের প্রচণ্ড মহাকর্ষে টেনে নিয়ে গ্রাস করেছে।
এই আবিষ্কার আমাদের সৌরজগতের বাইরে বাসযোগ্য গ্রহ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন ধারণা দিচ্ছে।
সাদা বামনটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত এবং পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫৫ আলোকবর্ষ দূরে। এর ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৫৭ শতাংশ হলেও আকারে এটি পৃথিবীর সমান। (আলোকবর্ষ মানে হলো এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, প্রায় ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।)
বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত সূর্যের মতো নক্ষত্র তাদের জীবন শেষে সব হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে লাল দানব (Red giant) পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং শেষে ঘন সাদা বামনে রূপ নেয়। এই সাদা বামনটি একসময় সূর্যের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি ভর বিশিষ্ট নক্ষত্র ছিল।
এখন পর্যন্ত গবেষকরা দেখেছেন, সাদা বামন নক্ষত্র সাধারণত গ্রহ, উপগ্রহ বা গ্রহাণুর মতো শিলাময় বস্তু গ্রাস করে। কিন্তু এবার প্রমাণ মিলেছে, এই নক্ষত্রটি মূলত বরফে সমৃদ্ধ একটি জগৎকে টেনে নিয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটি প্লুটোর মতো বরফমণ্ডলীয় কোনো গ্রহ ছিল অথবা এমন কোনো অংশ, যা সংঘর্ষে ভেঙে গিয়েছিল।
গবেষক স্নেহলতা সাহু জানান, নক্ষত্রটির পৃষ্ঠে যে রাসায়নিক চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে—এটি কোনো ধূমকেতু নয়, বরং প্লুটোর মতো একটি বরফমণ্ডলীয় জগৎ। কারণ সেখানে প্রচুর নাইট্রোজেন পাওয়া গেছে, যা প্লুটোর পৃষ্ঠে প্রধান উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত অন্তত ১৩ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে একটি নীল তিমির সমান ভর (Blue whale mass – পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণীর সমান ভর) এই নক্ষত্রে পতিত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কার প্রমাণ করে আমাদের সৌরজগতের বাইরেও প্লুটো, ধূমকেতু কিংবা বরফমণ্ডলীয় গ্রহের মতো বস্তু রয়েছে। আমাদের সৌরজগতে এই ধরনের বরফমণ্ডলীয় বস্তু পৃথিবীর মতো শিলাময় গ্রহগুলোতে পানি এবং জীবন গঠনের উপাদান সরবরাহ করেছে।
তাদের মতে, অন্য সৌরজগতেও এই ধরনের পানি-সমৃদ্ধ বস্তু থাকতে পারে, যা হয়তো সেখানকার শিলাময় গ্রহগুলোতে পানি ও প্রয়োজনীয় জৈব যৌগ পৌঁছে দিয়ে বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল