১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সিরাজগঞ্জে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক মরহুম মির্জা আব্দুল লতিফসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার জন্ম হয়েছে। এরকম দায়িত্বহীন কাজে যারা জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে, উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়।
গত ১৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে ‘রাজশাহী বিভাগের ক্রমিক নং ৩৪, পূর্বের নথির ক্রমিক নং-৯৬, নথি নম্বর-২৩৪/৭২, রাজাকারের নাম ও ঠিকানায় লেখা রয়েছে ‘পাবনা জেলার চৌহালী ও শাহজাদপুর থানার তাঁত মালিকদের পক্ষ হতে মো. জহুরুল ইসলাম মোল্লা কর্তৃক মির্জা আব্দুল লতিফ ও অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ’। মন্তব্য কলামে লেখা রয়েছে ‘অভিযোগ নথিতে নেই, মুলকপি পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ’ উল্লেখ রয়েছে। এ তালিকায় মির্জা আব্দুল লতিফের নাম থাকায় পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের সহ-অধিনায়ক সাবেক এমপি গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন তীব্র ক্ষোভ নিয়ে জানান, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক যদি রাজাকার হয় তাহলে আমরা কি? তিনি অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে রাজাকারের তালিকা থেকে মির্জা আব্দুল লতিফের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিকুল ইসলাম শফি জানান, সিরাজগঞ্জের প্রায় ৫০ থেকে ৫২ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মির্জা আব্দুল লতিফসহ আরো দু’একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি খুবই ন্যাক্কারজনক। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। আমরা আজকের মধ্যেই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করব। এ সময় তিনি অবিলম্বে বিষয়টি সমাধানের দাবি জানান।
মরহুম মির্জা আব্দুল লতিফের মেয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা মির্জা মুক্তি জানান, আমরা পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ। আমরা হতবাক। ধিক্কার জানাই যারা তালিকা তৈরি করেছে। মির্জা আব্দুল লতিফ মির্জা ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক। তার নেতৃত্বে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির গড়ে ওঠেছিল। বড় বড় যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। তার অধীনে ছিলো প্রায় সাত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। সে যদি রাজাকার হয় তাহলে তারাও রাজাকার হবে। মির্জা আব্দুল লতিফের পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটি বড় ধরনের চক্রান্ত। অবিলম্বে চক্রান্তকারীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক