অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বগুড়া বইমেলা বেশ জমে উঠেছে। প্রতিদিনই বই বিক্রি দিনদিন বাড়ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেই ক্রেতা আর বিক্রেতাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সকালের দিকেও ভীড় থাকে তবে সেটা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের। নিজের পছন্দমত বই সংগ্রহ করা নিয়ে পাঠক এই স্টল সেই স্টল ঘুরে ঘুরে কিনেছে নিজের জন্য বই। তবে শুরুর দিন থেকে শিশু-কিশোররাই মেলার বড় ক্রেতা। সবমিলিয়ে জমজমাট বগুড়া বইমেলা।
বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে ১০ দিনের বইমেলা আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। ছোট বড় ৭৫ টি স্টল রয়েছে মেলায়। সবচেয়ে বড় স্টল দিয়েছে নিউজ কর্নার পাবলিকেশন। এ স্টলে ছোটদের বঙ্গবন্ধু, ঠাকুরমা’র ঝুলি, পরীদের গান, পরীদের গল্প, ছোটদের নীতিকথা সহ বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই সহ দেশ বিদেশের বরেণ্য লেখকদের বই পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইসহ সব বই এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
বগুড়া বইমেলায় আসা পাঠকরা বলছেন, অতিরিক্ত খরচ করে আর ঢাকায় যেতে হচ্ছে না। ঢাকার সব বই এখন বগুড়া বইমেলাতে পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে পাঠকদের মাঝে আরও বেশ গুঞ্জন পড়েছে। নতুন বইয়ের তালিকা যেমন হোক, এবার তরুণরা বেশি কিনছে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের কল্পকথা ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশিত বই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট থেকে এবার আগামী শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়া বইমেলা শিশুদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিন ছুটির দিনে শিশুরা যেন নিজেদের পছন্দ মতে কেনাকাটা করতে পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিন শিশুদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করার জন্য বই বিক্রেতাদের বলা হয়েছে।
এদিকে, বগুড়া বইমেলর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাধারণ শ্রোতা, দর্শকে ঘিরে থাকছে বইমেলা প্রাঙ্গণ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক এইচ আলিম জানান, বগুড়া বইমেলাকে ঘিরে নতুন বই আসতে শুরু করেছে। প্রথম দিনে একটি বই দিয়ে শুরু হলেও ১০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ইতোমধ্যে হয়েছে। একটি জেলা শহর থেকে ১০টি সংখ্যায় হলেও আসলে অনেক ব্যাপকতা আছে। আরও কিছু নতুন বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। গত বছরের চেয়ে এবছর স্থানীয় লেখক, কবি ও সাহিত্যমনাদের বই প্রকাশ পাচ্ছে বেশি।
বগুড়া জিলা স্কুলের সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ ফজলার রহমান খন্দকারের কাব্যগ্রন্থ অট্টহাসির মোড়ক উন্মোচন করেন বগুড়া ইয়ূথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম টিপু। এদিনে প্রকাশ পায় সাহিত্যের ছোট কাগজ মতিয়ার রহমান সম্পাদিত একতারা, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর কাব্যগ্রন্থ অন্য মনে অন্য কোনখানে, আশরাফ আলী সরকারের কাব্যগ্রন্থ ২০৫২ সাল।
বইমেলায় প্রতিদিনই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসছেন অতিথিগণ। বই মেলাকে ঘিরে শহীদ খোকন পার্ক চত্বর বগুড়াবাসীর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আসছে মেলায়। সকাল ১১ টার পরই শিশুরা স্কুল শেষে বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় আসছে বই নিতে।
বইমেলায় আসা শিক্ষার্থী সুমা’র মা সাহিনা বেগম জানান, গত কয়েকদিন ধরেই মেয়ে মেলায় আসার জন্য বলছিল। আজ স্কুল ছুটি হওয়ার পর এসে একটা পরীর গল্পের বই আর ছোটদের বঙ্গবন্ধু কিনে দিয়েছি।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী প্রতিদিনই আসছে। বইমেলার মাধ্যমে তরুন প্রজন্মকে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা চেস্টা অব্যহত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ