ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ সময়ে দিনে দুপুরে এই বনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কেটে তা পাচারের অভিযোগ উঠেছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে। এই বন কর্মকর্তা বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বনের ঘাগরামারী এলাকা থেকে সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কেটে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে তা পাচার করেন।
এসময়ে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারটিতে ছিলো সুন্দরবনের তিন গাছ পাচারকারী। এসময়ে গাছ পাচারকারী তরুন বলেন, ‘এ গাছ ঘাগরামারী থেকে কেটে আনতে ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার সাহেব তাদের অনুমতি দিয়েছেন।’ তবে ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খান দাবি করে বলেন, ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ি থেকে এ গাছ আমাদের স্টেশনের (ঢাংমারী) স্থাপনা তৈরির কাজে আনা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা রয়েছে। তবে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে গাছ নেয়ার সময় ছিল না কোনও বনরক্ষী, ছিল তিনজন পাচারকারী।
ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান, সাবেক ইউপি মেম্বর মো. আফসার আলী ও সঞ্জয় কুমার বর্মন অভিযোগ করে বলেন, ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন এবং ঘাগরামারীর অফিসের কর্মকর্তা রউফ তাদের লোক (দালাল) দিয়ে সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়তই কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী, কাকড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ পাচার করে থাকেন। যারা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করে তাদের বিরুদ্ধে হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন বলেও অভিযোগ ওই গ্রামবাসীর।
আরা অভিযোগ করেন, এই দুই কর্তার সকল অনিয়মে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা বাদল ও ট্রলার মাঝি রহিম নামের দুই ব্যক্তি। এই দুই বন বনকর্তার সহযোগী বাদল এবং রহিমের অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এখন অতিষ্ট। সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কেটে পাচারের প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষের নামে দেয়া হয় হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা।
এ দিকে সুন্দরবন বিভাগের স্থাপনা তৈরির কাজে কোন কাঠ ব্যবহার করতে হলে তাদের জব্দকৃত গাছ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানান বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হক। ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন খানের সুন্দরবনের সদ্য গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসও আনোয়ার বলেছেন তাদের স্টেশনের জেটি নির্মাণের জন্য ওই গাছ নেয়া হচ্ছিল। তবে ওই গাছ বন থেকে সদ্য কাটা কি না সেটি আমি বলতে পারব না।
এ বিষয়ে বনবিভাগের খুলনাঞ্চল বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈন খান বলেন, সুন্দরবন থেকে সদ্য গাছ কেটে স্টেশনের কোন স্থাপনা তৈরি করার কোন সুযোগ নেই। দীর্ঘদিনের জব্দকৃত গাছ দিয়ে এসব স্থাপনা করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন। কোন কর্মকর্তা বনের গাছ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক