বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শালফা গ্রামে প্রায় দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছে স্থানীয়রা। নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা–পুলি, পায়েশ থেকে শুরু করে ১২টি গরু ও ১৪টি মহিষের মাংস রান্না করে অতিথি আপ্যায়নের রীতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। উৎসবকে ঘিরে বসেছে শিশুদের জন্য বিশাল মেলা।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই শতাধিক বছর ধরে বংশপরম্পরায় শালফাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে নবান্ন উৎসব জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়। সাত হাজারের বেশি কৃষক পরিবারের এই গ্রামীণ এলাকায় আমন ধান ঘরে ওঠার পর শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি। ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল ভেঙে আটা তৈরি, পিঠা বানানো, স্বজনদের আগমন—সব মিলিয়ে যেন এক মিলনমেলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
রবিবার সকাল থেকেই প্রতিটি ঘরে নতুন ধানের আমেজে তৈরি হচ্ছে নানা পিঠা, পুলি ও দেশীয় খাবার। উৎসবের নিয়ম অনুযায়ী এবারও গ্রামবাসী যৌথভাবে কেনা ১৪টি মহিষ ও ১২টি গরু জবাই করেছে। পরে সেগুলোর মাংস ভাগ করে স্বজনদের জন্য নানারকম খাবার রান্না করা হয়। উৎসবের আগের দিন মহিষগুলো গ্রামে ঘুরিয়ে উৎসবের বার্তা জানানো হয়।
উৎসব ঘিরে শালফা, পালোয়ানপাড়া, কমারপুর, কালাইকুড়ি, সাগরপুর, ছোট আখিড়া, বড় আখিরা, নিমাইদীঘিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে চলে আনন্দ–উল্লাস। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠেন একসঙ্গে। মেলায় বসেছে নাগরদোলা, বেলুন, ঘোড়ার গাড়ি, চুড়ি, কসমেটিক্স, মিষ্টান্নসহ নানা দোকান। পাশাপাশি চলছে মোরগ লড়াই, দৌড় প্রতিযোগিতা ও রশি টানাটানির মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা।
৭২ বছর বয়সী আফজাল হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি দেখছেন নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা বানানো আর মহিষের মাংস রান্নার এই ঐতিহ্য। তখন যেমন আত্মীয়স্বজন আসতেন, এখন সেই পরিসর আরও বেড়েছে।
শালফা গ্রামের বাসিন্দা ও আদমদীঘি রহিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শেফাউর রহমান তালুকদার বলেন, “প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই গ্রামে নবান্ন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মেলা, খেলাধুলা ও অতিথি আপ্যায়ন। একদিনের উৎসব হলেও এর আমেজ থাকে তিন দিন।”
গ্রামবাসীদের মতে, নবান্ন শুধু উৎসবই নয়—এটি নতুন ফসলের সুখ, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা এবং মিলনমেলার এক অনন্য উপলক্ষ। অনেকের কাছে এটি ঈদের আনন্দকেও ছাপিয়ে যায়।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন