এবার সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনে পদত্যাগকারী এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুলিশের সাবেক আইজি কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের এমপি নূর মোহাম্মদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটা ১৮ মিনিটে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডির টাইমলাইনে ত্রাণ কমিটি থেকে পদত্যাগকারী নেতা পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্ট্যাটাস দেন।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নূর মোহাম্মদ এমপি'র এ পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
স্ট্যাটাসে নূর মোহাম্মদ এমপি দাবি করেন, ওই আওয়ামী লীগ নেতা পৌর ত্রাণ কমিটিতে থাকতে অনুরোধ করলে তিনি তাকে পৌর কমিটির বদলে পাকুন্দিয়া উপজেলা ত্রাণ কমিটির সদস্য হিসেবে তাকে ঠাঁই করে দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, “আজকে যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম ত্রাণ কমিটির অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আপনি পদত্যাগ করেছেন। প্রথম সভায় যোগদান করেই আপনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সবার বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আপনার কথাগুলো অস্পষ্ট। নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। উল্লেখ করেননি কোন ধরনের বা কোন মাত্রার অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কে বা কারা জড়িত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে থাকেন।তবে সংশোধনযোগ্য কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে।
এখানে কেউ অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে তা শোধরানো বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবেও অবহিত থাকার চেষ্টা করি।
আপনার কর্তব্য ও দায়িত্ব ছিল অনিয়ম ও দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে কমিটিতে কথা বলা ...
এবং আমাকে জানানো। কোন ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যা মনে হয় করতে পারতেন।
আপনি আমার মনোনীত সদস্য ....আমার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি বা জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি।
এই দুঃসময়ে আপনি ‘চমক’ দেখানোর চেষ্টা করছেন...নিজকে জাহির করার সুযোগ নিচ্ছেন। পরিবেশ ঘোলাটে করছেন। ত্রাণ বিতরণের পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
এ ধরনের সস্তা কাজ করে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না ...
নিজের দিকে তাকান আর প্রশ্ন করুন।
পাকুন্দিয়া উপজেলায় কে কত টাকায় বিকোয় তা আমার জানতে বাকি নাই।
আপনার কাছে অনিয়ম বা দুর্নীতির কি প্রমাণ আছে আর এর সাথে জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা কারা জড়িত তা আপনাকে স্পষ্ট করে বলতে হবে মো. মোতায়েম হোসেন স্বপন।”
উল্লেখ্য, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোতায়েম হোসেন স্বপন ১৩ মে (বুধবার) কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত পাকুন্দিয়া উপজেলা ত্রাণ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে জমা দেওয়া এ পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “আমি ১০ মে উপজেলার ত্রাণ কমিটির সভায় উপস্থিত হয়ে যতটুকু জ্ঞাত হইতে পারলাম যে, উক্ত কমিটিতে কোনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নাই এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণ হচ্ছে।
তা-ই উক্ত কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ বাঞ্ছনীয় বিধায় পদত্যাগ করছি। মাননীয় সাংসদের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, দলীয় প্রতিনিধি হিসেবে এর প্রতিকার করতে চাই।”
ত্রাণ কমিটির সদস্য পদ থেকে এ আওয়ামী লীগ নেতার পদত্যাগের বিষয়টিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, “তিনি এ ধরনের ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিমূলক অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগের ন্যূনতম ভিত্তি থাকলে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। কোনও প্রমাণ এবং নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তিনি কেন পদত্যাগ করলেন সেটি তিনি-ই ভালো বলতে পারবেন।”
অপরদিকে, নূর মোহাম্মদ এমপি গণমাধ্যমকে বলেন, “সম্ভবত তার নিজের কোনও ধান্দা সফল না হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির কোনও সুযোগ না পেয়ে তিনি নিজে ক্ষিপ্ত হয়ে এ কঠিন সময়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ত্রাণ কমিটি থেকে পদত্যাগ করে গোটা ত্রাণ কমিটিকে বিতর্কিত করার প্রয়াস চালিয়েছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। আর এজন্যই তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি সাধারণ এলাকাবাসীর কাছে স্পষ্ট করেছি।”
বিডি প্রতিদিন/কালাম