তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে চীন ও জাপানের মধ্যে তীব্র কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিচ্ছে টোকিও।
এর অংশ হিসেবে চীনকে শান্ত করা এবং সাম্প্রতিক উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে বেইজিংয়ে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের সঙ্গে তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে জাপানের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক সোমবার বেইজিং যাচ্ছেন বলে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে।
উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার শুরু হয় মূলত জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির একটি বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরে। সম্প্রতি পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ চালায়, তবে তা জাপানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে এবং সামরিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়ও সামনে আসতে পারে।
মূলত এতদিন ধরে জাপানি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করাটা এড়িয়ে চলতেন, কারণ এতে বেইজিং আরও ক্ষুব্ধ হতে পারে। এছাড়া গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন।
জাপানের মিডিয়া জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও ওসেনিয়া ব্যুরোর প্রধান মাসাআকি কানাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা লিউ চিনসঙের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে কানাই তাকে জানাবেন যে- তাকাইচির মন্তব্য জাপানের নিরাপত্তা নীতিতে কোনও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না এবং একইসঙ্গে তিনি চীনকে এমন কোনো আচরণ করা থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানাবেন যা দুই দেশের সম্পর্কে ক্ষতি করতে পারে।
অবশ্য কানাই সত্যিই চীন সফরে যাচ্ছেন কিনা তা জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
এর আগে গত শুক্রবার বেইজিং সতর্ক করে বলেছিল, তাইওয়ান ইস্যুতে জাপান সামরিক হস্তক্ষেপ করলে তারা ‘ভয়াবহ পরাজয়’ বরণ করবে। পাশাপাশি জাপানে ভ্রমণের বিরুদ্ধে চীনা নাগরিকদের সতর্কও করা হয়। আর এটি জাপানের পর্যটনব্যবসার জন্য বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এর আগে গত সোমবার নিউ তাইপেতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তে বলেন, চীন জাপানের বিরুদ্ধে ‘বহুমুখী আক্রমণ’ চালাচ্ছে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানাচ্ছি। চীনকে সংযত আচরণ করতে হবে এবং বড় শক্তির মতো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করা তাদের কাজ নয়। শৃঙ্খলাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ফেরাটাই চীনের জন্য উপকারী হবে। আমরা চাই তারা ভেবে সিদ্ধান্ত নিক।’
এছাড়া লাই ও তার সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবিও প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম