২ আগস্ট, ২০২০ ১১:৪৬

কুড়িগ্রামে বন্যায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক বানভাসীর দুর্দশা, বিবর্ণ ঈদ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামে বন্যায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক বানভাসীর দুর্দশা, বিবর্ণ ঈদ

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দের মধ্য দিয়ে সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানি দিয়ে উদযাপন করেন ঈদুল আজহা। কিন্তু ঈদের আনন্দ ছিল না বন্যা দুর্গত এলাকা ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া মানুষজনের।জেলার ৯ উপজেলার সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের অন্তত ৫৬টি ইউনিয়নের সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষের অধিকাংশের কেটেছে উচু বাঁধে ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিদারুন কষ্টে। সন্তান সন্তুতি ও পরিবার পরিজন নিয়ে আর সব অন্য স্বাভাবিক দিনের মত তাদের কাটে এ দিনটি। সরকারিভাবে ঈদের দিনে বিকেলে স্বল্পপরিসরে কয়েকটি স্থানে কিছু মাংস বিতরণ করা হলেও তা অনেকের ভাগ্যে জুটেনি।

ধরলা নদীর পাড় ঘেঁষা উঁচু বাঁধের রাস্তায় বাস করছেন ওসমান মিয়া ও তার স্ত্রী জোসনা খাতুন। প্রায় দীর্ঘ দুই মাস যাবত তার বাড়িতে এক বুক পানি থাকায় চলে আসেন বাঁধে। সাথে রয়েছে তার আরো দুই সদস্য। ওসমান মিয়া বলেন, এতদিন যাবত বাঁধে বাস করছি কোনরকম ধাপড়ি পেতে। কেউ আজ পর্যন্ত কী খাই না খাই খোঁজ নিতে আসলো না। 

একই অবস্থা ওই বাঁধের মরিয়ম, ছকিনা, রহমানসহ আরো অনেকের। রহমান মিয়া জানান, পৌর মেয়রের কাছে ধরণা দিয়েছি ৫-৬দিন কিন্তু কোন ফল হয়নি। গরিব মানুষের কোন ঈদ নেই। 

দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কবলিত হয়ে পানিবন্দী রয়েছে জেলার সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ। বাড়িঘরে পানি ডুবে থাকায় উচু বাঁধেই একমাত্র আশ্রয়স্থল তাদের। কেউ বা আশ্রয় নিয়েছেন পাশে স্কুলে। করোনাভাইরাসের কারনে একদিকে কাজ নেই দীর্ঘসময় অপরদিকে তাদের তিনদফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। যেন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত তাদের দশা। এসব বানভাসী মানুষ চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে নাজেহাল । তাদের ঈদের দিনটিও ছিল অন্যসব দিনের মত। একই চিত্র জেলার প্রায় ৭৩টি ইউনিয়নের ৫৬টির সাড়ে ৫শতাধিক গ্রামে। কোন কোন চরে মাংস বিতরণ করা হলেও ভাগ্যে জুটেনি অধিকাংশের। তাই তাদের এবারের ঈদ একেবারেই ম্লান হয়ে গেছে। 

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, আমি যাত্রাপুরে চরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি গরু কোরবানি দিয়ে মাংস বিতরণ করেছি। শহরের কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যক্তিও বিভিন্ন চরে মাংস বিতরণ করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৪টি সংসদীয় আসনের এমপিগণ তাদের নিজনিজ এলাকার মানুষের মাঝে কোরবানি করে বিতরণ করার কথা। এছাড়াও রৌমারী ও রাজিপপুরে কয়েকটি চরাঞ্চলে বেসরকারি উন্নয়ণ সংস্থার মাধ্যমেও কয়েকটি গরু কোরবানি করে বিতরণ করা হয়।

কুড়িগ্রাম-২ সংসদীয় আসনের এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমি প্রতিবছরের ন্যায় আমার নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মচারিসহ দুঃখী মানুষকে কোরবানির মাংস ও চাল বিতরণ করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারেও শনিবার বিকেলে তাদের এবং কিছু বানভাসী মানুষকে ২ কেজি চাল ও কিছু মাংস বিতরণ করেছি। 

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ মন্ত্রীকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা করি ঈদের পরে হলেও বানভাসীরা তা থেকে বঞ্চিত হবেন না। 


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

সর্বশেষ খবর