আজও সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দৃশ্য চোখে ভাসে। দুর্ঘটনার শিকার অসহায় মানুষের চিৎকার, আর্তনাদ মনের মাঝে ভেসে ভেড়ায়। মানুষের লাশের সারি, ছোট শিশুদের কান্না। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দভাগ রেলস্টেশনে সেই ভয়ানক ট্রেন দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছিলেন মামুন মিয়া নামে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী।
তিনি বলছিলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ভোররাত। বাইরে শোনা যাচ্ছিল হাজারো মানুষের বাঁচাও বাঁচাও শব্দের আর্তনাদ। এ শব্দে প্রকম্পিত পুরো এলাকা। লাফ দিয়ে উঠে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির দুজন দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনের বগির জানালা ভাঙার চেষ্টা করছে। দেরি না করে আমি ঢুকে গেলাম বগির ভেতর।
বগির ভেতরের দৃশ্য দেখে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ একটি আহত নারী আমার পায়ে ধরে বলছে বাবা আমাকে বাঁচাও। চেয়ে দেখি ওই নারীর একটি পা কেটে আলাদা হয়ে রক্ত ঝরছে। দেরি না করে তাকে কোলে করে জানালা দিয়ে বের করে দিলাম।
তিনি আরও বলেন, মহল্লার অন্যান্য লোকজনও লেগে গেছে উদ্ধার কাজে। আমার সাথে আরো এক যুবক ভেতরে প্রবেশ করে নিহত ও আহতদের বের করতে লাগলাম। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ছুটে এসেছে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদকর্মীরা। ততক্ষণে স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ প্রায় শেষই করে ফেলেছিল।
উপজেলা শহর থেকে উদ্ধারকর্মীরা আসার আগেই স্টেশনের পাশে রাখা স্থানীয়দের দুটি ট্রাকে করে আহতের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর কাজ চলছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ট্রেনের চাকার ফাঁকে আটকে থাকা মরদেহ উদ্ধারের কাজে অংশগ্রহণ করেন।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা। নিহতদের লাশ নিয়ে রাখা হয় পাশের বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সকাল ৯টার পর থেকে নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বিদ্যালয়সহ আশপাশের পরিবেশ।
শনাক্ত করে স্বজনরা একে একে নিয়ে যায় উদ্ধার হওয়া ১৬টি মৃতদেহ। ঘটনার অনেকদিন পর পর্যন্ত অনেক স্বজনকে ঘটনাস্থলে এসে নিরবে কাঁদতে দেখা গেছে। সেদিনের সেই ঘটনার আজও ভুলতে পারেননি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী মামুন মিয়া।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ নভেম্বর ভোররাতে কসবার মন্দাভাগ রেল স্টেশনে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথার মধ্যে সংর্ঘষে ১৬ জন প্রাণ হারায়। সেই ক্ষত আজও ভুলতে পারেনি এলাকার মানুষ। স্বজন হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
এ উপলক্ষে কসবা সচেতন নাগরিক সমাজ নিহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কসবা রেলস্টেশনে আলোচনা সভা ও মোমবাতি প্রজ্জলন করে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই