৩০ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:৪২

বগুড়ায় হঠাৎ ধান-চালের দাম কম, লোকসানের মুখে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় হঠাৎ ধান-চালের দাম কম, লোকসানের মুখে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা

আমনের ভরা মৌসুমে ধান-চালের বাজার অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় লোকসানের মুখেও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন চাতাল ব্যবসায়ীরা। ছবিটি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা বাজার এলাকা থেকে তোলা।

বগুড়ায় হঠাৎ করেই ধান-চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত দুইদিনের ব্যবধানে প্রতিবস্তা চালে (৯৫ কেজি) ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সেই তুলনায় ধানের দাম না কমলেও প্রতি মণ ধানে কমেছে ৫০-৬০ টাকা।

আমনের নতুন ধান-চাল সরবরাহ বাড়তে থাকায় বাজার হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

ধান-চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চাতাল উঠলেই চালে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কতদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে-এনিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা।

কৃষকরা জানান, নানা প্রতিকূলতার কারণে চলতি মৌসুমের আমন ধানের ফলন কম হলেও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছিল। তবে প্রতিদিনই ধানের দাম কমছে। স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতি মণে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এরপরও ধারদেনা পরিশোধ, রকমারি রবি ফসল চাষ ও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে কমদামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে একাধিক ধান-চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ২০০ থেকে ৩০০ মণ ধান ধরে এরকম ২৫০-৩০০টি এবং ৫০-৬০ মণ ধান শুকানো যায় এরকম ১২৫০-১৩০০টি চাতাল রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে শতাধিক সেমি অটো রাইচ মিল।

ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন, আব্দুস সালাম, জামাল মিয়া, গোলাম রব্বানী জানান, প্রতিটি বড় চাতালের বিপরীতে ১৪ জন ও ছোট চাতলে চারজন করে শ্রমিক কাজ করেন।

তারা জানান, সম্প্রতি ভরা আমন মৌসুমে ধান-চালের দাম কমতির দিকে থাকার কারণে ব্যাপারীরাও চাল কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর স্থানীয়ভাবেও তেমন একটা ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান আমদানি করতে হয়। তাছাড়া একটি চাতাল নিয়মিত চালু রাখতে ৫-৬ চাতাল ধান মজুদের প্রয়োজনও রয়েছে।

কিন্তু মোকামে চাহিদা মতো ধান মিললেও চালের বাজার কমতির দিকে থাকায় লোকসানের সর্বোচ্চ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়ও আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে। ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি পথে বসার উপক্রম হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এসব ব্যবসায়ীরা।

সাধুবাড়ী যুমনা সেমি অটো রাইচ মিলের সত্ত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, শেরপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ১০১০-১০৩০ টাকা, রনজিত ১০৫০-১০৮০ টাকা ও বিআর-৪৯ জাতের ধান ১১২০-১১৫০ টাকা, কাটারিভোগ ১২০০-১৩২০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, প্রতি মণ ধান উক্ত পরিমাণ টাকা দরে ক্রয় করে ঘরে আনতে আরও ২৫-৩০ টাকা খরচ পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয়। এই ধান সিদ্ধ ও শুকানো বাবদ প্রতিমণে ব্যয় হয় ২০-২২ টাকা। আর ভাঙাতে আর ২২ টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে ওই পরিমাণ (এক মণ) ধান থেকে বড়জোর ২৮-২৯ সের চাল পাওয়া সম্ভব। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই পরিমাণ চাল বাজারে বিক্রি করলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী একেকজন ব্যবসায়ীর প্রতিবস্তায় ১৫০-২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানা চাউলকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ জানান, ধানের দাম তুলনামূলক না কমলেও চালের দাম কমছেই। তাই বাজার অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তবে কী-কারণে ভরা আমন মৌসুমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও চালের আড়তদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম কমাচ্ছেন বলে দাবি করেন এই মালিক সমিতির নেতা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর