এ বছর আলু উৎপাদনে বেশ চমক দেখিয়েছে শেরপুরের আলু চাষিরা। কবছর বাম্পার ফলন হলেও আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আলু উৎপাদনে কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল চাষিরা। তবে গত বছর আলুর ভাল দাম পাওয়ায় এবার আলু লাগানোর জমির পরিমাণে সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ মনে করে এ বছর আলুর উৎপাদনের রেকর্ড হবে। চাষিরা মনে করছে দৈব কোন ঘটনা না ঘটলে বাম্পার ফলন হবে এবার।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শেরপুর জেলার সব উপজেলায় কমবেশি আলুর চাষ হয়েছে। তবে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে। তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ১৫১ মে. টন জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৩২২ মে. টন। যা আগে কখনও হয়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৯৪ হাজার ৬০৯ মে. টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবাদ হয় ৪ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে । উৎপাদন হয় ১ লক্ষ ৯ হাজর ৫৬০ মে.টন। ১৮-১৯ অর্থবছরে আবাদ হয় ৫ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫০ মে. টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লাগানো হয় ৫ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮৭ মে. টন।
উল্লিখিত ৫ বছরের মধ্যে জেলায় এবারই তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে এবং লক্ষমাত্রাও বেশি। কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যের বাইরে এবার আরও বেশি জায়গাতে আলুর চাষ হয়েছে বলে প্রান্তিক কৃষকরা জানিয়েছে। দুবছর ধরে আলুর দাম ভাল বলে আগ্রহ নিয়ে এবার চাষিরা আলুর আবাদ করেছে বলে চাষিদের দাবি। ২০১৫ সালের পর থেকে ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় আলু উৎপাদনে ভাটা পড়লেও দুবছর ধরে আলুর আবাদ বাড়ছে। চাষিদের মত এবার আলু উৎপাদন উপযোগী আবহাওয়া, সরকারি সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতার কারণে আলুর বাম্পার ফলন হবে। তবে দাম কমে যাওয়ার আতংকও রয়েছে বেশ। কৃষকদের দাবি দেশে উৎপাদিত আলুর একটা অংশ বিদেশে রফতানি করা হোক। সদরে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি, বিএডিসির (শুধুমাত্র সরকারি বীজ রাখা হয়) ও নকলা উপজেলায় সরকারি একটি মোট তিনটি হিমাগার আছে। এই হিমাগারগুলোতে শেরপুরে উৎপাদিত আলু রাখার মত জায়গা সংকুলান হয়ে উঠে না। বাধ্য হয়ে বেশি মূল্যে অন্য জেলার বেসরকারি হিমাগারে আলু রাখতে হয় । চাষিরা চান, আলু রাখতে আরও সরকারি হিমাগার করা হোক।
শেরপুরের আলু চাষি আতাউর রহমান জানিয়েছেন, গতবার আলুতে ভাল লাভ পেয়েছি। এবার আরও বেশি জমিতে আলুর চাষ করেছি। কদিন পর আলু ঘরে উঠাবো। বাম্পার ফলনের আশায় আছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোহিত কুমার পাল জানিয়েছেন, দুবছর ধরে আলুর ভাল দাম পেয়েছে কৃষকরা। ফলে আলু উৎপাদনে আগ্রহ বেড়েছে। বাজারে আলুর চাহিদা বেড়েছে, কৃষকদের খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। সবজি হিসেবে আলুর চাহিদা বেড়েছে। তবে আলু বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে কৃষক আলুর আরও ভাল দাম এবং আলু চাষে কৃষকরা আরও মনোযোগী হতো।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন