গ্রীষ্মের দাবদাহের মাঝে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে নদী পাড়ের মানুষের মাঝে বেশ স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরে নদীতে তেমন পানি না থাকায় নৌ চলাচল করতে পারতো না। বালুর চর পেরিয়ে যেতে হাঁপিয়ে উঠতো নদী পাড়ের মানুষ। সেই চরজাগা ধু ধু বালুর নদীতে এখন পাহাড়ি ঢলে পানি দেখা দেওয়ায় নদী পাড়ের ১১২টি চরের মানুষের মাঝে আনন্দ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। গ্রীষ্মকালে পানি শুকিয়ে তলানিতে যায়। আর এ সময় নদী পাড়ের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যমুনাপাড়ের মানুষগুলো নানা দুর্ভোগ নিয়ে পায়ে হেঁটে মোটরসাইকেল, সাইকেল অথবা ঘোড়ার টানা গাড়িতে করে চলাচল করে থাকে। মানুষের পাশাপাশি নদী পাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও একইভাবে পরিবহন করতে হয়।
শুষ্কমৌসুমে দুভোগ যেমন দাঁড়ায় আবার ভরা বর্ষায় দেখা দেয় বন্যা। জুলাই-আগস্ট মাসে যমুনা নদীতে বন্যা দেখা দেয়। এর আগে যমুনা নদীতে পানির দেখা তেমন দেখা যায় না। নৌকাগুলো অচল হয়ে নদী পাড়ে পড়ে থাকতো। আয়হীন হয়ে যেত জেলে ও নৌকার মাঝির পরিবার।
কিন্তু চলতি বছর মে মাসে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীতে পানির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ফলে নদীতে নৌকা চলাচলের পথ স্বাভাবিক হয়েছে। নদীর খেয়া ঘাটগুলো বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রী এবং মালামাল উঠানামা ও নৌকার শ্যোলো মেশিনের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে নদীঘাট।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে সারিয়াকান্দির যমুনার কালিতলা, মথুরাপাড়া, দেবডাঙা, পারতিতপরল, রৌহাদহ এবং বাঙালির ছাগলধরা, হিন্দুকান্দি, নারচীসহ প্রভূতি খেয়া ঘাটগুলো। ঘাটগুলো এখন নানা বর্নের মানুষ দিয়ে মুখরিত। পানি বাড়ার কারণে যমুনার ডাকাতমারা, মূলবাড়ী, ইন্দুরমারা, কাজলা, বেনিপুর, বাওইটোনা, বেড়াপাঁচবাড়িয়া, চরদলিকা, চালুয়াবাড়ী, বেনিপুর, শোনপচা, চরঘাগুয়া প্রভ‚তি চরসহ প্রায় ১১২ টি চরের গ্রামের মানুষ তাদের নিজস্ব নৌকা নিয়েই নদীপথে সহজেই চলাচল করতে পারছেন। নদীতে পানি হওয়ায় নদী পাড়ের মানুষের কিছুটা দুর্ভোগ কমেছে। পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালী নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৈশাখ মাস থেকে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন হলো পানি বৃদ্ধি হলেও পানি এখনও বিপদসীমার অনেক নীচেই রয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি সদরের খেয়া ঘাটের মাঝি আলতাফ আলী জানান, নদীতে পানি না থাকায় খেয়া নৌকা বহুদিন বন্ধ ছিল। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে নৌকা আবার পুরোদমে চলাচল শুরু করেছে। নানা ধরনের মালামাল আর যাত্রী দিয়ে খেয়ার নৌকা যাত্রী পরিপূর্ণ থাকে।
সারিয়াকান্দি কাজলার কুড়িপাড়া চরবাসী আজিজার রহমান বলেন, নদীতে পানি হওয়ায় সহজেই কৃষিপণ্যগুলো বাজারে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষিপণ্য নিয়ে আসতে পরিবহণ খরচ কমের সঙ্গে দুর্ভোগ কমেছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১০.৬৮ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৬.৫৮ মিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ তাসকিয়া জানান, গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা এবং বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো বন্যা হাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাসেল মিয়া জানান, যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌরুটের গতিপথ স্বাভাবিক হয়েছে। নৌযানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে অনেক মানুষই তাদের কর্মসংস্থান ফিরে পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন