কৃষকের সময় ও খরচ বাঁচাতে ফসল হারভেস্টরকে সহযোগিতা করতে একটি সহযোগী যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন দিনাজপুরের আনোয়ার হোসেন। সরকারী সহযোগিতা পেলে কৃষকের ঘরে ঘরে এই যন্ত্র পৌঁছে দেয়ার কথা বলছেন তিনি।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক এই আনোয়ার হোসেন তার নিজের প্রচেষ্টায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকের কৃষিতে সুবিধার জন্য একের পর এক সময় সাশ্রয়ী বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে ইতিপূর্বে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।
এবার আনোয়ার হোসেন তৈরি করেলেন ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিনের সহযোগী মেশিন। এই মেশিন দিয়ে কৃষকরা হারভেষ্টার মেশিন থেকে স্বল্প খরচে ধান পরিবহণ ও বস্তাজাত করতে পারছেন।
ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা নানা সমস্যার সম্মুখিন হয়। তাই কৃষকদের কাটা মাড়াই সুবিধার্থে কৃষি দপ্তরের অধিনে ভর্তুকি মূলে ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য অত্যাধুনিক হারভেষ্টার মেশিন সরবরাহ করেন। ওই হারভেষ্টার দিয়ে কৃষকরা দ্রুত সময়ে জমির ধান কাটা ও মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় একটি মেশিনে ধান সংগ্রহের ধারণ ক্ষমতা থাকে ২৫ মন। কাটা মাড়াই’র পর জমি থেকে কৃষকের সুবিধাজনক স্থানে ওই ধান আনলোড কিংবা বস্তাজাত করতে সময়সহ হারভেষ্টারের জ্বালানী ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশী। আবার ওই ধান বস্তাজাত করতে লেবার ব্যবহারে খরচও বেশী। এই চিন্তাধারা থেকে পল্লী চিকিৎসক ও কৃষক আনোয়ার হোসেন উদ্ভাবন করেন হারভেষ্টার সহযোগী এ পরিবহণ যন্ত্র। যা দিয়ে এক একর জমির ধান হারভেষ্টার থেকে কৃষকের সুবিধাজনক স্থানে পরিবহণ করতে সময় লাগে কম এবং খরচ হয় মাত্র ৬ থেকে ৭ শত টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমি ধান শ্রমিক দিয়ে পরিবহণ করতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা।
বাসুদেবপুর গ্রামের ২টি হারভেষ্টারের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা লিখন জানান, তিনি সরকারের ভর্তুকিতে দু’টি হারভেষ্টার নিয়েছেন। কিন্তু হারভেষ্টা দিয়ে ধান কাটা মাড়াই দ্রুত হয়। তবে হারভেষ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানী খরচ অনেক বেশী। আরো ভালো হয় সরকার হারভেষ্টরের সাথে এই সহযোগী যানও যদি ভর্তুকিতে কৃষকদের সরবরাহ করতে পারে।
এ ব্যাপারে উদ্ভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, সরকার কৃষকের লাভের কথা চিন্তা করে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্য দিয়ে ধান কাটার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন কিনছে। কিন্তু এ হার্ভেস্টার মেশিনের ধান সংগ্রহের ভান্ডারটি তুলনামূলক ছোট হওয়ায় ১০/১৫ মিনিট পর পর ধান আনলোড করতে হয়। এতে যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়। একইসাথে ধান আনলোড করতে রাস্তা কিংবা শুকনো উঁচু জমিতে যাতায়াত করতে হার্ভেস্টার মেশিনের তেল খরচ ও রক্ষণা-বেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ধানের জমি থেকেই ধান সংগ্রহের বিকল্প হিসেবে এই সহযোগী মেশিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, আনোয়ার হোসেন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করলে এই সহযোগী যন্ত্রটি কৃষকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারব। অন্য সময় হার্ভেস্টার সহযোগী এ মেশিনটি ধান পরিবহণ ছাড়া, জমি চাষ করা, হার্ভেস্টার মেশিনকে পরিবহন করা, ধানের বস্তা পরিবহন ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করা যায়। যন্ত্রটির মূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, প্যাকেজ হিসেবে এর মূল্য সাড়ে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা মাত্র।
উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসেন ২০১৪ সালে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্বাইড হারভেষ্টার মেশিন তৈরি করে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তার তৈরি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনের মূল্য মাত্র ৮ লাখ টাকা। অথচ বিদেশ থেকে এই মেশিন আমদানি করতে খরচ হয় অনেক বেশী।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল