১৯ জুন, ২০২১ ১৯:০৫

বেহাল নারায়নপাড়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিত্যক্ত ভবনে চলছে কার্যক্রম

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ:

বেহাল নারায়নপাড়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিত্যক্ত ভবনে চলছে কার্যক্রম

নওগাঁর রাণীনগরের প্রত্যন্ত গ্রাম নারায়নপাড়া। ওই গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আশির দশকে স্থাপন করা হয় নারায়নপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই পঙ্গু রোগীতে পরিণত হয়েছে। সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাজারো মানুষ।

জানা যায়, ওই অঞ্চল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই মানুষের মাঝে জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। কিন্তু আশির দশকে স্থাপনের পর থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আর কোন সংস্কার না করাই বর্তমানে নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। অনেক বছর আগেই দাপ্তরিক ভাবে কেন্দ্রের সকল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন মানুষের মাঝে জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে স্থানীয়রা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। চারিদিকের নিরাপত্তা বেষ্টনী নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাতের আঁধারে মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রের চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে পরিণত হয়েছে পুকুরে। স্থানীয়রা গবাদিপশুর খড়পালা দিয়ে রেখেছে। ভেঙ্গে পড়েছে ভবনগুলোর দেয়াল ও দরজা-জানালা। প্রধান ভবনের পরিত্যক্ত অংশ কোনভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখানে কোন প্রকারের চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা যায় না। শুধুমাত্র কিছু ঔষুধ বিতরণ শেষে আবার সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিলসহ অনেকেই বলেন, জরুরী চিকিৎসা সেবা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পেয়ে থাকি কিন্তু বর্তমানে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতেই ভয় লাগে। চিকিৎসা নিতে আসা অনেক মানুষের মাথায় ছাদের পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাই সরকারের কাছে দাবি এই অঞ্চলের খেটে-খাওয়া মানুষদের ঘরে ঘরে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে দ্রুত আধুনিকায়ন করা হোক। 

কেন্দ্রে দায়িত্বরত ফর্মাসিষ্ট মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কখন যে উপরের পলেস্তারা কিংবা ছাদের ঢালাই মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবুও এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সকল ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কোন উপায় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের ভিশনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টরা শুধুমাত্র জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। আমি অনেকবার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল নিয়ে লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর