কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি কিছুটা বেড়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথেই ভাঙনের মুখে পড়েছে লালমনিরহাটের মহিষখোচার সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ ও শতশত ঘর বাড়ি। এছাড়া তিস্তার উপকূলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন । পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার ভাঙনে ২৭ টি ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে। তিস্তার উপকূলের ২৪টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ফলে বন্যা আসার আগেই তিস্তাপাড়ে দেখা দিয়েছে আতংক।
পাউবো আরো জানায়, পানি বৃদ্ধির ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু মাত্র আদিতমারির মহিষখোচা এলাকার সলেডি স্প্যার-২ এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সাথে উজানের চৌরাহা মাদরাসা এলাকায় ১৩টি বসতভিটা ও কয়েক একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে শতশত বসতবাড়ি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া সদর উপজেলার চর গোকুন্ডায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুলাই) দুপুরে ধসে যাওয়া স্প্যার বাঁধ-২ এবং নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, স্প্যার বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জমা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলেই ব্যবস্থা নিতে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্ষাকাল নদীপাড়ের জেলা হিসেবে আমাদের বন্যা মোকাবিলা করতে হবে। বন্যা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ভাঙনের মুখে পড়া বসতবাড়ি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নদীপাড়ের তথ্য সার্বক্ষণিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় পলি ও বালু জমে তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে সামান্য পানি বাড়লে তিস্তা নদীর দুই কূল উপচিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বেশকিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চরাঞ্চলের সাজু মিয়া বলেন, প্রতি বছর তিস্তাপাড়ের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। কিন্তু সরকার তিস্তা পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করার কোনো চিন্তা করে না। আসছে আবারও বন্যা, এই বন্যায় তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষের যে কী হবে বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
সদরের গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে তার ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের কয়েক’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে । পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিকের (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) চেয়ে ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯টায় পানি প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। সামান্য পানি বৃদ্ধিতে তিস্তা নদীর বাম তীরের সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ এবং শতশত বসত বাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সলেডি স্প্যার-২ এ গতবছরের ক্ষতস্থানটি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তা ব্যারাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকালের দিকে কিছুটা বাড়লেও দুপুরের পরে কমতে শুরু করে। তবে রাত পর্যন্ত পানি বাড়ার সম্ভবনা কম।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল