রবিবার সকালের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কুমিল্লা নগরী। নগরীর স্টোডিয়াম এলাকা, লাকসাম রোড, রেইসকোর্স, চকবাজার, নিমতলী, বাগিচাগাঁওসহ প্রায় সবকটি অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ে মানুষ। এদিন গরীর অন্তত ২লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে বিপাকে পড়েছেন। বেশিরভাগ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফ্রিজ, সোফাসহ ব্যবহৃত ফার্নিচার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ বৃষ্টির মধ্যেই অন্যত্র মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন।
পাশাপাশি হাসপাতাল এলাকা, জরুরিসেবার আওতাভুক্ত সরকারি অফিস প্লাবিত হওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কুমিল্লার খাদ্যগুদাম প্রায় চার ফুট সমান পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ডুবে গেছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। জলমগ্ন হওয়ায় কুমিল্লা বিসিকে খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ তৈরিসহ প্রায় সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, টিঅ্যান্ডটি কার্যালয় প্রাঙ্গণ। এদিন ১১৪মিমি বৃষ্টি হয় কুমিল্লায়।
সরেজমিন কুমিল্লা নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘর থেকে পানি সেচে বের করছেন বাসিন্দারা। অনেক বাসায় পানির পরিমাণ এত বেশি যে, সেচে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে। নিচু এলাকার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ডুবে ডুবে মাছ-তরকারি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণসহ কলোনি এলাকায় কোমর সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসায় পানি ঢোকায় প্রয়োজনীয় আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে।
কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা সায়েদুল হকের চাচা মারা যান রবিবার ভোরে। গ্রামের বাড়ি নাঙ্গলকোটে যাবেন, কিন্তু সে সুযোগ পাচ্ছেন না। জলাবদ্ধতা ও লকডাউনের কারণে শহর থেকে কোনো গাড়ি বের হচ্ছে না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সমন্বয়হীনতায় কুমিল্লা নগরীতে অরাজকতা চলছে। তিনবার সওজ'কে চিঠি দিয়েছি। তারা কাজ বন্ধ রাখেনি, খাল ভরাট করে তারা ফোরলেনের কাজ করছে। রেলওেয়ের ডাবল লেনের কাজের সময় তারা ছয়টি ব্রিজ ভেঙে ফেলে। সদরের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। এখন পানি সরার জায়গাই যদি বন্ধ রাখা হয়, শহরকে স্বর্ণ দিয়ে মুড়িয়ে ফেললেও লাভ হবে না। আমি সোমবার সদর আসনের সংসদ সদস্য, সওজ, রেলওয়ের প্রতিনিধি ও পিডিবির সাথে বৈঠকে এর সমাধানের চেষ্টা করবো।
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা-ই-রাব্বি বলেন, আমরা খাল ভরাট করেছি। এ কথা সঠিক নয়। আমরা ৩৫ জন দখলদার উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে সহযোগিতা করেনি। আমরা আমাদের জায়গা ভরাট করে সড়ক সম্প্রসারণ করেছি।
রেলওয়ে ডাবললেন বাস্তবায়ন প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর আবদুল ওহাব বলেন, আমরা জলাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই ভূমি অধিগ্রহণসহ সকল কাজ করছি। সিটি করপোরেশনের দাবি সঠিক নয়। তারপরও ব্রিজ ভাঙা বা অন্য কারণে শহরে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার