কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারপল্লী। নতুন তৈরি এবং পুরাতন দা-কুড়াল ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের কামাররা। কিন্তু সংশয় কাটছে না যেন তাদের। করোনাভাইরাসের এই সময়ে মানুষের অবস্থাও ভাল না। তাই এসব বেচাকেনা আগের তুলনায় কমেছে। এরপরেও আশা নিয়ে কামাররা আবার কাজে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
বীরগঞ্জ পৌরসভার একমাত্র কামার পল্লীর প্রবীণ কামার মো. শাহ আলম (৬৫) বলেন, আমি যখন এই পেশায় আসি তখন আমার বয়স ১৪/১৫ বছর। বীরগঞ্জে তখন ১০০ এর বেশি দোকান ছিলো। বর্তমানে ২০/২২টি দোকান আছে। আনুমানিক শত খানেক লোক এই পেশায় কাজ করছে। তাও কষ্টে আছে।
জেলখানা পাড়ার বাসিন্দা কসিমুদ্দিন জানান, কয়লা সমস্যার কারণে এখন ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা কয়লা পাঁচ’শ টাকায় ক্রয় করে আনতে হয়। আগে এক বস্তা কয়লায় দুইদিন চলতো, কিন্তু এখন যায় এক মাস। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। আগে প্রতিদিন প্রায় এক’শটির মতো কাস্তে তৈরি করতাম কিন্তু এখন ১০টিতে দাঁড়িয়েছে। কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন, বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচ চালাতে খুব কষ্ট।
আরও কয়েকজন কামার শিল্পীরা বলেন, বর্তমানে কাঁচা লোহা ও উৎপাদনের উপকরণসমূহের মূল্য বৃদ্ধি,উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাস, ইস্পাত নির্মিত মেশিনে তৈরি জিনিসপত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা এবং অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে কামারশালা প্রায় হারাতে বসেছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে, আবার যারা আকঁড়ে ধরে আছে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কোরবানি পশুর মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত চাপাতি, দা, ছুরি, বটিসহ কিছু ধারালো জিনিস ব্যবহৃত হয় তাই কামাররা এসব তৈরিতে ব্যস্ত। এবার করোনার কারণে কোরবানি কম হতে পারে, কোরবানি কম হলে এসব সরঞ্জাম বিক্রি হবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এরপরেও অনেক আশা নিয়ে এসব কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনেক কামার।কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের পেশায় এসেছে ব্যস্ততা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা