পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১১ নভেম্বর। নির্বাচনে জিতে অনেকের মুখে হাসি ফুটলেও অনেক প্রার্থী নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
জানা গেছে, ভোটে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়েছে প্রার্থীদের। রাতের অন্ধকারে ভোট কেনা বেচারও অভিযোগ আছে। ভোট কেনা বেচার দৌড়ে অনেকে জমি হারিয়েছেন। অনেকে হারিয়েছেন মাঠের ধান। তারা জানান ভোটারদেরকে চা খরচ দিতে হয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে অনেক ভোটার তাকেই ভোট দিয়েছে।
ভজনপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ভ্যানচালক আব্দুল জলিল। এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার মেম্বার প্রার্থী হয়েছিলেন। মাঠের ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসার আগেই অগ্রীম বিক্রি করে নির্বাচন করেছেন তিনি। একই ভাবে ওই ওয়ার্ডের রেজাউল ইসলামও মাঠের ধান মাঠেই বিক্রি করেছেন। ওই ওয়ার্ডের আসাদুল হক বিক্রি করেছেন জমি।
তারা বলেন, ভোটারদেরকে চা খেতে টাকা দেওয়ার একটা রেওয়াজ আছে। তাই দিয়েছি। তবে কোন ভোটার টাকা চায়নি।
আব্দুল জলিল জানান, পরিবার নিয়ে চলতে একটু কষ্ট হবে এখন। আর নির্বাচনে যাবো না।
নাম গোপন রাখার শর্তে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, ভোটের আগের রাতে টাকা দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ভিটেবাড়ির পাশের জমি বিক্রি করে ভোটারদের হাতে হাতে টাকা দিয়েছি। ভোটে হেরে গিয়েছি। এটাই আমার শেষ নির্বাচন ছিলো।
চা খরচ দিতে হয়েছে প্রায় সব প্রার্থীকেই। ভোটের পরে তেঁতুলিয়ার সর্বস্তরে এখন কার কতো খরচ এসব আলোচনাই চলছে। সাধারণ ভোটাররা বলছেন তারা কারও কাছেই টাকা চায়নি।
তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের ভোটার আলিমুল হক জানান, প্রার্থীরা নিজেরাই টাকা দিয়ে গেছেন। টাকা না নিলে অনেকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। জানা গেছে, জেতার জন্য কোন কোন প্রার্থী কোটি টাকার বেশি খরচ করেছেন। নাম গোপন রাখার শর্তে এক ভোটার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট প্রতি কেউ কেউ হাজার টাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ ২ হাজারও দিয়েছেন। অনেক মেম্বার প্রার্থী ভোট প্রতি ২শ' থেকে ৫শ' টাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় সুধীজনরা বিষয়টিকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, ভোটাররা না চাইলেও প্রার্থীরা টাকা দেন। ভোটের মাঠে টাকা দেয়া যেমন ঠিক নয় টাকা নেয়াও ঠিক নয়। দুটোই অপরাধ। সামাজিক ভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। নানা উদ্যোগ নিতে পারে প্রশাসনও।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন