শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে হুমায়রা বিনতে কাদেরী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিলেও বাবা পূরণ করতে পারছেন না মেয়ের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন। কথা বলতে না পারলেও হুমায়রা ইশারায় ও খাতায় লিখে জানায়, উচ্চ শিক্ষায় তার প্রবল আগ্রহের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ইচ্ছা তার।
দিনাজপুর কোতয়ালীতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল বাবা মো. হুমায়ুন লোহানী ও মা মেরীনা লোহানীর ঘরে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারী জন্ম নেয় হুমায়রা বিনতে কাদেরী। জন্মের পর ১৮ মাস বয়সেই চোখের সামনে বিস্ফোরিত একটি গাড়ির চাকার শব্দে হুমায়রা’র জীবনে সূচনা ঘটে এ অধ্যায়ের। আর এ ঘটনায় শ্রবণ ও বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে সে।
এরপর বাবা বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসার চেষ্টা করেও অর্থাভাবে পারেননি কন্যার সু-চিকিৎসা করাতে। ফলে কথা বলতে এবং শুনতে পায় না হুমায়রা। চিকিৎসার জন্যে বাবাকে তার বাড়িও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে তারা দিনাজপুর শহরের কালিতলায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর লেখা-পড়ায় একাগ্রতা দমাতে পারেনি হুমায়রা বিনতে কাদেরীকে। ইশারা ও উচ্চ শব্দকে পুঁজি করে নিজের মধ্যে গানের বিস্তার ঘটায় সে। এবার এইচএসসি’র বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে হুমায়রা। এরআগে পিইসি, জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে এবং এসএসসি’তে ৪.৫০ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হুমায়রা বিনতে কাদেরী।
ফলাফলে উচ্ছ্বসিত বাবা-মা মেয়ের ভালো ফলাফলে সন্তুষ্ট হলেও এই খুশিকে লাগাম দিয়ে রেখেছে মেয়ের সুস্থতা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় অর্থ চাহিদা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যর্থ হলেও ভারতের চিকিৎসকরা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসা করালে কিছুটা শুনতে ও বলতে পারবেন হুমায়রা। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ মেয়ের সুস্থ হওয়ার সেই স্বপ্নকে দাবিয়ে রেখেছে। কনস্টেবল পদে চাকরি করে স্বল্প আয় দিয়ে মেয়ের উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারছে না বাবা। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
বাবা হুমায়ুন লোহানী জানান, বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হওয়ায় দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কোনো সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারেনি হুমায়রা। তবে বেসরকারি দিনাজপুর সারদ্বেশরী স্কুল তার দায়িত্ব নেয়। ভালো ফলাফলেও কোনো সরকারি কলেজ তার দায়িত্ব নেয়নি। বিভিন্ন সরকারি কলেজ ঘুরে ঘুরে অবশেষে দায়িত্ব নেয় দিনাজপুরের হলিল্যান্ড কলেজ। শিক্ষকরা তার মেয়েকে বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষাদান করেছেন। অর্ধেক বেতনে পড়িয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
হলিল্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম জানান, হুমায়রা বিনতে কাদেরী বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী হলেও অত্যন্ত মেধাবী ও সদা হাসোজ্জল। সে ক্লাসে শিক্ষকের বক্তব্য মোটেও শুনতে পারতো না। তাই তার পাশে তারই ক্লাসের অন্য মেয়েকে বসানো হতো। সে তার কাছ থেকে শিক্ষককের বক্তব্য লিখে নিয়ে বুঝতো। শিক্ষকরাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তাকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে অথবা লিখে বোঝাতো। এইচএসসি’র ফলাফলে যার সাফল্য দেখিয়েছে হুমায়রা। তার এই ফলাফলে ধন্য হলিল্যান্ড কলেজ।
উপযুক্ত সুযোগ পেলে হুমায়রা অনেক ভালো করবে এবং দেশ ও জাতির জন্য অবদান রাখবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হুমায়রার প্রতিবন্ধকতাকে কাটাতে রাষ্ট্র ও সমাজ এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল