নওগাঁর ধামইরহাটে ঘুকসী ও মঙ্গলখাল পুনঃখনন না করায় ৪ হাজার কৃষক বেকায়দায় পড়েছে। খালের দুই পাড়ের ৪ হাজার কৃষক পূর্বে খালে পানি সংরক্ষণ করে সেই পানি দিয়ে রবি শস্যসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল ফলাতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো পুনঃখনন না করায় খালে পলি পড়েছে। এতে বর্ষার শেষে পানি ধরে রাখা যায় না। ফলে খাল দুটো কৃষকের আর্শিবাদে পরিণত না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, এলজিইডির টেইসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৭ বছর পূর্বে ঘুকসি ও মঙ্গলখাল খনন করা হয়। মঙ্গলখাল ভারত সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঘুকসি খাড়ী মিলিত হয়েছে। অপরদিকে ঘুকসী খালও ভারত থেকে বের হয়ে ত্রিমোহনীতে ছোট যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিইডির উদ্যোগে মঙ্গলখালের তিন কিলোমিটার একশত মিটার পুনঃখনন করা হয়। অপরদিকে ঘুকসি খালের সাড়ে তিন কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়। বর্তমানে খাল দুটোর খননকৃত অংশে বর্ষার শেষে স্লুইস গেট বন্ধ করে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের শস্যসহ বোরো ধানবীজ বপন করা হয়। কৃষক সহজে খালের পানি ব্যবহার করে এসব ক্ষেতে পানি সেচ দিতে পারে। এছাড়া খালে প্রচুর পানি থাকায় হাঁস পালন ও বিশেষ করে দেশী মাছ প্রাকৃতিকভাবে চাষ হচ্ছে। কিন্তু খালের বাকী অংশ পুনঃখনন না করায় পানির অভাবে খাল শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলখালের উত্তর পাড়ের কৃষাণী ফরিদা খাতুন ও ঘুকসী খালের পূর্ব পাড়ের কৃষাণী রুপালী পাহান বলেন, আগে খালে শুস্ক মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকতো। এ পানিতে আমরা হাঁস পালন করতাম। কিন্তু খাল খনন না করায় পলি পড়ে খাল ভরে গেছে। এতে আর পানি থাকে না। এর ফলে আমাদের হাস পালন করা বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলখালের পশ্চিম পাড়ের কৃষক আজিজার রহমান এবং ঘুকসী খালের পশ্চিম পাড়ের কৃষক ফারাজ কল্পন ও বাবু তেওয়ারী বলেন, এ খালের পানি ব্যবহার করা আমরা আলু, সরিষা, গমসহ শীতকালীন শাকসবজি ও বোরো বীজতলায় পানি সেচ দেয়া হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন খাল পুনঃখনন না করায় খালে আর পানি থাকে না। বর্তমানে খাল মরা খালে পরিণত হয়েছে। ঘুকসী খালের সভাপতি কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ঘুকসী খাল সমিতির ৩৯০ জন সদস্য রয়েছে। সদস্য খালের পানি ব্যবহার করে হাঁস পালন, মৎস্য চাষ ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু খাল খনন না করায় পানি ধরে রাখা যায় না। এতে খালের দুই পাড়ের কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন।
এলজিইডি ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, খাল দুটির পলি জমা হওয়া অংশের পুনঃখনন করা হলে কার্যকরভাবে পানি ধারণ সম্ভব হবে। সেই সাথে কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশুপালনের ক্ষেত্রও তৈরি হবে। ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য প্রকল্প এলাকার জনগণের দারিদ্র বিমোচন কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল