১৭ দিনের ব্যবধানে দুই শিরোপা। কী অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের। গতকাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চার জাতি ডাবল রাউন্ড লড়াইয়ে ছয় ম্যাচে ছয় জয় নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাগতিকরা। ৫ জুলাই মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এশিয়ানকাপ বাছাইয়ে শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে নারী জাতীয় দল প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ চূড়ান্তপর্বে জায়গা করে নিয়েছে। যা আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ দিনে দুই শিরোপা, এতেই প্রমাণ মেলে নারী ফুটবলারদের অগ্রযাত্রা। ছয় ম্যাচে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট আফঈদাদের। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্টে রানার্স-আপ হয়েছে নেপাল।
শেষ ম্যাচে নেপালের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগও ছিল। তারা যদি জয় পেত, পয়েন্ট সমান হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শিরোপা জিতে যেত। তা আর হয়নি। কোনো সমীকরণের আর প্রয়োজন পড়েনি। বাংলাদেশের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি নেপাল। সাগরিকার ঢেউয়ে ভেসে গেছে তারা। প্রথম পর্বে নেপালের বিপক্ষে লাল কার্ড পেয়ে তিন ম্যাচ মাঠের বাইরে ছিলেন স্ট্রাইকার সাগরিকা। সেই নেপালের বিপক্ষেই তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটল। ১০ নম্বর জার্সির মান রেখেছেন তিনি। রীতিমতো ম্যাজিক প্রদর্শন করেছেন তিনি। হ্যাটট্রিকসহ একাই ৪ গোল করেছেন। টুর্নামেন্টে এটি ছিল তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন। আসলে পুরো দলই দুর্দান্ত খেলেছে। বলা যায়, পাত্তাই পায়নি নেপাল। প্রথম দুই ম্যাচে কোচ বাটলার সেরা একাদশ নামান সেরাদের নিয়ে। এরপর খেলোয়াড়দের মান যাচাইয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। অলিখিত ফাইনালে আসল দল নিয়েই বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা রাঙিয়েছেন মেয়েরা। জয়ের পেছনে বড় অবদান সাগরিকারই। স্বল্প ক্যারিয়ারে সেরা ম্যাচ খেলেছেন বললেও ভুল হবে না।
ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত। অনেকে তাই ভেবেছিলেন বাটলার মেয়েদের রক্ষণাত্মক কায়দায় খেলাবেন। না শুরু থেকেই স্বাগতিকরা ছিল আক্রমণমুখী। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ সামাল দিতে পারছিল না। আট মিনিটেই উৎসবে কেঁপে ওঠে গ্যালারি। সাগরিকার পায়ের ছোঁয়ায় এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত। সুযোগ হাতছাড়া করায় তা আর হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ছিল আরও ভয়ংকর। অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া নেপাল কিছুই করতে পারেনি। ৫২ ও ৫৭ মিনিটে দ্ইু গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সাগরিকা। গ্যালারিজুড়েই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আর সাগরিকা বলে চিৎকার। লাল-সবুজের পতাকা উড়ছিল পত্ পত্ করে। ৭৬ মিনিটে নিজের চতুর্থ ও শেষ গোলটি করেন সাগরিকা। ৭১ মিনিটে ভুল অফসাইডের পতাকা না ওড়ালে তার গোল সংখ্যা দাঁড়াত পাঁচে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের উদ্দেশে ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। শিরোপা উৎসর্গ করা হয় নিহতদের উদ্দেশে।