সারি সারি ওক, রেড ম্যাপল আর চায়নিজ এলম গাছের মাথার ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এটিঅ্যান্ডটি স্টেডিয়ামের চূড়া। দূর থেকেই বেশ স্পষ্ট বোঝা যায় দানবাকৃতির কমপ্লেক্স। সবুজের মধ্যে ফুটে থাকা একটি বিশাল ফুলের মতোই মনে হয়। সামনের বছর বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু হতে যাচ্ছে ডালাসের আর্লিংটনে অবস্থিত এ স্টেডিয়াম। এখানে সেমি, কোয়ার্টার ফাইনালসহ মোট নয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
এটিঅ্যান্ডটি নামে পরিচিত হলেও এ স্টেডিয়াম নিয়ে ভক্তদের আবেগের কমতি নেই। কেউ বলেন কাউবয়েজ ক্যাথেড্রাল; কেউবা ডাকেন দ্য প্যালেস ইন ডালাস। বিখ্যাত মার্কিন ফুটবল দল ডালাস কাউবয়েজের সমর্থকরা দাবি করছেন, স্টেডিয়ামের নাম হোক টম ল্যান্ড্রি। তিনি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত টানা ২৮ বছর ডালাস কাউবয়েজের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় এনএফএলে বেশ দাপট দেখিয়েছে দলটি। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যেই স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে ব্রোঞ্জমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের নানান দিকে ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানান পাতা। দ্য ক্যাচ নামের মূর্তিটিও মার্কিন ফুটবলের ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি। ফুটবল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া একজন খেলোয়াড়কে দেখা যায় এ মূর্তিতে। এটি ডালাস কাউবয়েজের কিংবদন্তি রিসিভারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া আছে লিজেন্ডস প্লাজা। স্টেডিয়ামের উত্তর-পশ্চিম অংশে স্থাপিত কিংবদন্তিদের বিভিন্ন ভাস্কর্য। প্রতিটি মূর্তির নিচেই রয়েছে খেলোয়াড়দের নাম, খেলার বছর এবং তাঁদের অবদানের কথা। স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল পার্ক। টিকিট না পেয়েও যারা স্টেডিয়ামে হাজির হন, তাদের খেলা দেখার জন্য এ পার্কের কাছেই রয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন। এ ছাড়া ফোয়ারা আর নানান ফুলের গাছে শোভনীয় করে তোলা হয়েছে চারপাশের পরিবেশ।
স্টেডিয়ামটি মূলত মার্কিন ফুটবল দল ডালাস কাউবয়েজের ঘরের মাঠ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামকে অনেকেই বলেন ‘জায়ান্ট স্ক্রিনের ঘর’। কারণ এর ভিতরের ৬০ গজ দৈর্ঘ্যরে এইচডি ভিডিও স্ক্রিনটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। ছাদটি পুরোপুরি বন্ধও করা যায়, আবার সূর্যের আলো ঢুকিয়ে খোলা রাখাও সম্ভব। টেক্সাসের প্রচ গরমেও নিশ্চিন্তে এখানে খেলা উপভোগ করা যায়। স্টেডিয়ামটির ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। এখানে আছে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
স্টেডিয়ামের বাইরে একটি বেঞ্চে বিশ্রাম নেওয়া টেক্সাসবাসী তরুণী অ্যানজেলা বলেন, ‘আমি প্রায়ই বিকালে এখানে হাঁটতে আসি। মাঠে খেলা থাকুক বা না থাকুক, এ এলাকা সব সময় প্রাণবন্ত। বিশ্বকাপে যখন মানুষ ভিড় করবে, তখন এটা হবে একটা উৎসবের শহর।’ ডালাসের বাংলাদেশি অভিবাসী ফাহিম মাহমুদ বলেন, ‘এ স্টেডিয়ামের চারপাশের গাছপালা, বিশাল খোলা মাঠ আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশে এমন কিছু থাকলে পরিবার নিয়ে নিয়মিত ঘুরতে যাওয়া যেত।’ স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন বলছিলেন, ‘এ স্টেডিয়াম বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’ বিশ্বকাপের দিনগুলোতে শুধু মাঠের মধ্যেই নয়, বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে ফুটবলের আনন্দ।