ফরিদপুরে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় শুধুমাত্র ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ১৫৪ জন রোগী। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের সেবা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও হাসপাতাল চত্বরের গাছতলায়। অসহনীয় গরমের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে দেখা গেছে। ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ফরিদপুরে আশংকাজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি না করায় চাপ বেড়েছে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে। এ হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগীর বেড সংখ্যা মাত্র ১০টি। কিন্তু রবিবার সকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালটি ভর্তি রয়েছেন ১৫৪ জন রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জনবলের অভাব ও শয্যা সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন।
রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরেও রোগীরা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই হাসপাতালের বেড না পেয়ে বারান্দা ও হাসপাতাল চত্বরের গাছতলায় চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। শহরের শোভারামপুর এলাকা থেকে ডায়রিয়া জনিত সমস্যা নিয়ে সকালে জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন সজল কুমার দম্পত্তি। তারা জানান, তাদের শিশু পুত্র গত রাত থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। সকালে হাসপাতালে আনা হলে বেড না থাকায় ভর্তি করতে পারেননি। অন্য প্রাইভেট হাসপাতালে গেলেও ডায়রিয়া রোগী তারা ভর্তি না করায় ফিরে এসেছেন। হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ী ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কমলাপুর মহল্লার আলামিন, লক্ষীপুর মহল্লার জমির শেখ, বায়তুল আমান এলাকার ছহিরুন নেছার সাথে কথা হলে তারা জানান, ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে তারা হাসপাতালে এলেও এখানে ভর্তি হতে পারেননি।
গাছতলায় তাদের থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাথরুম কোথায় করবেন এমন সমস্যা থাকায় তারা বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে, হাসপাতালটিতে বেড সংকট থাকায় বেশকিছু রোগী খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে এসব রোগীদের বাথরুম করতে গিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। টেপাখোলা এলাকার সোহান মীর বলেন, অবস্থা বেশ ভয়াবহ। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। বেড না পেয়ে ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে রোগীদের বাড়ী পাঠিয়ে দেবার কথা জানালেন গোয়ালচামট এলাকার আসমা বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে যাবার পর তার রোগীকে ভর্তি না করে স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসা নিতে বলেছেন।
জনবল কম থাকার কথা স্বীকার করে হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিলুর ইসলাম জানান, বেড সংখ্যার তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশী। প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে তাদের পক্ষে সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে।
সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে আশংকাজনক হারে। হাসপাতালের শর্য্যা সংখ্যা কম থাকায় পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডটিকে ডায়রিয়া রোগীদের রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটু সচেতন হলেই ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বিডি প্রতিদিন/এএ