নওগাঁর কৃষকেরা শ্রমিক-সঙ্কটের কারণে মাঠ থেকে ঘরে ধান তুলতে পারছেন না। এদিকে কিছু দিন ধরে বৈরি আবহাওয়া শুরু হয়েছে। ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে অধিকাংশ মাঠের ধান। অনেক ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলেই মাঠের নুইয়ে পড়া পাকা ধান ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।
তারা বলছেন, মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তারা ধান কাটতে পারছেন না। বিশেষ করে নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, মান্দার ঠাকুরমান্দা, আন্দাসুরা, নওগাঁ সদরের বিল মনসুর, হাঁসাইগাড়ী, সরইল, দিঘলীর বিলসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে যেসব কৃষক ধান আবাদ করেছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ সামান্য বৃষ্টিতেই বিলের ধান ডুবে যায়।
ঈদের দিন থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জমিতে পানি জমে গেছে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই অনেক মাঠের ধান পানিতে তলিয়ে যাবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি, মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম, চান্দাশ, নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, মান্দার ভালাইনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এখনও হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্য নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। গত তিন-চার দিন ধরে নওগাঁর সদরের হাঁপানিয়া বাজার ও দুবলহাটি বাজার, মহাদেবপুরের মাতাজিহাট মোড় ও নিয়ামতপুরের ছাতড়া বাজারে গৃহস্থদের ভিড় আর স্থানীয় এবং অন্য জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের নিয়ে টানাটানির চিত্র চোখে পড়ে।
নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘ছাতড়া বিলে এবার ১৪ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ আগে ক্ষেতের সব ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার কারণে এক বিঘা জমির ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। অন্য বছর বাইরের জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসে। গত দুই বছর করোনার সময়েও শ্রমিকের এতো সঙ্কট হয়নি। কিন্তু এবার বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এসেছে খুব কম। স্থানীয় শ্রমিক থাকলেও তারা যেসব কৃষকের ধান কাটার চুক্তি নিয়েছেন সেগুলোই কেটে শেষ করতে পারছে না। এদিকে খেতের ধান ডুবে যেতে বসেছে। ধান নিয়ে এবার মহাবিপাকে পড়েছি।’
সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ধানের ফলন বেশি থাকলেও এ বছর খুব বেশি লাভ হবে না। সেচ, সার ও পরিচর্যা বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ হাজার করে টাকা খরচ হয়েছে। তারপর ঝড়ে ক্ষেতের ধান নুইয়ে পড়ায় ১০-১২ শতাংশ চিটা হয়ে গেছে। আবার শ্রমিক খরচ পড়ছে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫ হাজার টাকা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সঙ্কটের কারণে কৃষকরা ধান কাটতে পারছেন না। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত শ্রমিক চলে আসবে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল