৩০ জুন, ২০২২ ১৬:৩০

বগুড়ায় বন্যায় পৌনে ২১ কোটি টাকা মূল্যের ফসলের ক্ষতি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বন্যায় পৌনে ২১ কোটি টাকা মূল্যের ফসলের ক্ষতি

বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যায় চার উপজেলার প্রায় পৌনে ২১ কোটি টাকা মূল্যের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস বলছে, বন্যায় আড়াই হাজার কৃষকের ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে।

জানা যায়, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার মধ্যে দিয়ে যমুনা নদী এবং শেরপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে বাঙালি ও করতোয়া নদী বয়ে গেছে। জুন মাসের শুরু থেকেই যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বাড়তে থাকে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে যমুনার শাখা বাঙালি নদীতেও পানি বৃদ্ধি পায়। স্বভাবগতভাবে দুটি নদীই ভাঙ্গন প্রকৃতির। চলতি বছরের জুন মাস থেকে নদী দুটিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রথমে নদী এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। 

এরপর গত ১৭ জুন শুক্রবার বিকাল ৬ টায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পর্যায়ক্রমে ২১ জুন মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৬৪ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে বন্যা সৃষ্টি হয়ে ৮৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। প্রায় দেড় লাখ মানুষ বন্যার শিকার হন। ২২ জুন থেকে বন্যার পানি কমতে থাকে। কয়েকদিন পানি কমে ২৮ জুন পর্যন্ত যমুনার পানি বিপৎসীমার ৭৬ সে.মি. নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ কদিনের বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা ও শেরপুর উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চার উপজেলা মিলিয়ে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি ১ হাজার ৬১০ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, সবজি, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও আখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটের। পাটের মোট ১ হাজার ১১০ হেক্টর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাটের পর ক্ষতি হয়েছে আউশ ধানের। আউশ ধানের জমি নষ্ট হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর। চা উপজেলা মিলিয়ে বন্যায় মোট আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৫৮১ হেক্টর জমির ফসল। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৩১৩ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত জমির ফসলের আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। চার উপজেলা মিলিয়ে কৃষকের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, আমার ৭ বিঘা জমির আধাপাকা কাউন পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৮ বিঘা জমিতে পাট ছিল, তার মধ্যে মাত্র ৩ বিঘা জমির পাট আধাপাকা অবস্থায় কোনমতে কেটে নিতে হয়েছে। বাকি জমিতে পানি উঠেছে। এখনো জমি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি। কিছু জমির পাট পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশ ক্ষতি হয়েছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বন্যায় কিছু কিছু কৃষকের আংশিক আবার কিছু কৃষকের সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে। জুন মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত আর্থিকভাবে চারটি উপজেলার প্রায় পৌনে ২১ কোটি টাকার মত ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। 

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান বলেন, যমুনা নদীতে আবারও পানি বাড়ছে। গত কয়েক বছর থেকে যাচ্ছে যে নদীতে পানি কমার পর আবারও বেড়ে থাকে। পানি বাড়লেও এ পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর