ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়া, শ্রমিক ও লবনের মূল্য বেশী এবং চামড়া বিক্রি নিয়ে দিনাজপুরে চামড়া ব্যবসায়ে ব্যাপক দরপতন। ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না। কারণ পরিবহনসহ লবণজাত করতে যে খরচ, বিক্রি করে তা উঠবে না। এদিকে, চামড়ার দামের সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে পাচারের আশংকায় হিলিসহ বিভিন্ন সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।
বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের বৈঠক, এফবিসিসিআইর আশ্বাস আর ট্যানারী মালিকদের প্রতিশ্রুতি কোনটাই কাজে আসেনি। এখন পর্যন্ত পাওনা টাকা না পাওয়ায় এবারের কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। ৫ বছরে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে এবার দিনাজপুরে মাঝারী এবং বড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরকারি রেটে চামড়া কিনলেও অনেকে সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, লবনের দাম বেশী, দক্ষ শ্রমিক সংকট আর বকেয়া টাকা না পাওয়া চরম দুর্ভোগে তারা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরকারি রেটে চামড়া কিনে অনেকে সেই দামে বিক্রি করতে পারেনি। তবে আড়তদারদের দাবী সরকারি রেটের চেয়ে বেশী দামে চামড়া কিনেছেন।
এদিকে, বকেয়া পরিশোধসহ নগদে চামড়া বিক্রির জোর দাবী জানিয়েছেন চামড়া মালিক গ্রুপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুরের রামনগর চামড়া মার্কেটে ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই ওই বাজারের রাস্তায় ফেলে দিয়েছে চামড়া। তাই বাজার এলাকার রাস্তার চারপাশে ছাগলের চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই চামড়া বাড়ি নিয়ে যেতে পরিবহন বাবদ তাদের আরও লোকসান হবে। আবার প্রক্রিয়াজাত করতে গেলে লোকসানও হয়ত বাড়বে বলে জানায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। সোমবার সকালে পৌরসভার বর্জবাহী গাড়ীগুলো রাস্তায় পড়ে থাকা ছাগরের চামড়া তুলে পরিস্কার করতে দেখা গেছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার বাজার দিনাজপুর শহরের রামনগর চামড়া মার্কেট। একসময় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসেন খুচরা ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দিন দিন এর বাজার সংকুচিত হয়েছে। এখানে ছোট বড় শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানায়, একবার লবন দিয়ে দিতে গরুর চামড়ায় ৪০ টাকা এবং ছাগলের ১০ টাকা মজুরী দিতে হয়। এর সাথে যোগ হবে লবনের ও ঢাকায় পাঠানোর খরচ।
দিনাজপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলফিকার আলী স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের জানান, দিনাজপুরের রামনগরে রয়েছেন শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার থাকলেও গত দু’দিনে চামড়া সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার।
বিডি প্রতিদিন/এএ