শোকের সাগরে ভাসছে বাড়ির সবাই। দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো গ্রামের আকাশ-বাতাস। ৩ বছর বয়সী ধীরের চোখে মুখে অপেক্ষা। মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে সে। কখন আসবে মা। দুধের তৃষ্ণায় যেন তার বুক ফেটে যায়।
এদিকে ৫ বছর বয়সী মহানন্দ এতোদিনে বুঝে ফেলেছে তার মা আর কোনো দিন আসবে না। মলিন মুখ নিয়ে ছটফট করে বাড়ির এখানে এখানে ছুটে বেড়াচ্ছে। যদি হঠাৎ মা ফিরে আসে! তারা দুই ভাই এখন দাদী নানী আর বাবার সাথে থাকে।
বাবা কার্তিক রায় জানান, প্রতিদিন রাতের বেলা ছেলেটা মার কাছে যেতে চায়। এপাশ ওপাশ করে। দুধ খেতে চায়। আমি তাকে বলি আসবে বাবা, তোমার মা বেড়াতে গেছে। কাল সকালে আসবে।বাবার সাথে মহানন্দ ও ধীর
ছত্রশিকারপুর গ্রামে মহানন্দ-ধীরদের বাড়ি। মহালয়ার দিনে নতুন জামা-কাপড় পড়ে মায়ের সাথে বদেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেখতে যাচ্ছিল ধীর। নৌকাডুবিতে বেঁচে যায় সে। মা লক্ষি রানী ডুবে যায় করোতোয়ার জলে। কার্তিক রায়ের পরিবার থেকে ৪ জন মৃত্যু বরণ করেছে। এ ঘটনায় ৩১ নারী নিহত হয়েছে।
একইভাবে দাদির কোলে চড়ে সর্বক্ষণ মাকে খুঁজছে তিন বছরের অরন্য। এখনো জানেনা মা হয়ে গেছে দূর আকাশের তারা। তার বাবা বাসুদেব শোকে স্তব্ধ। বাসুদেব জানায়, ছেলের কান্না সহ্য করতে পারছিনা। এখনো মায়ের দুধ ছাড়েনি। কিভাবে কি করবো কোন দিশা নাই।
অন্যদিকে সন্তান হারানোর বেদনায় কেঁদেই চলেছে মায়েরা। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাশ। স্বপ্নের শিশুরা আর নেই তাদের কোলে। কোনদিন মা বলে ডাকবে না আর। গুরুগোবিন্দপুর গ্রামের প্রতিমা রায় হারিয়েছে দুই কন্যাকে। কবিতা রানী (১১) আর পুতুল রানীকে (১৪) সন্ধ্যায় পড়তে বসতো। পাশে বসে থাকতেন তিনি। বাবা রামবাবু হোটেল শ্রমিক অনেক রাতে ফিরতেন। দুই মেয়ে আর মা মিলে খুনশুটি করতে করতে বাবার জন্য অপেক্ষা করতেন। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বলছিলেন প্রতিমা রানী। একসময় ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে যান তিনি। শুক্রবার দুই মেয়েরে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষ করা হয়েছে। নৌকাডুবির ঘটনায় ১৮ পরিবারের ২১ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান, মরদেহ উদ্ধার এবং পরিবারকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে সক্রিয় থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনের সময় তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল