সরকারবিরোধী আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার হলেও, নবগঠিত জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে ঘিরে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে পাবনা জেলা বিএনপি। কোন্দলে জর্জরিত জেলা কমিটি ভেঙে দেয়ার পর, পরপর দুইবার আহ্বায়ক কমিটি করেও জেলা বিএনপিতে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং নবগঠিত কমিটি বিভিন্ন উপজেলায় ও পৌর কমিটি গঠন করা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে। অখ্যাত নিষ্ক্রিয় নিজস্ব বলয়ের লোকজন নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা ও পৌর কমিটিসহ অধীনস্থ বিভিন্ন ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা নিয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অভ্যন্তরেই চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর চিঠি দিয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম-আহ্বায়ক।
সোমবার ডাকযোগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু ও যুগ্ম আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা এই চিঠি পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা।
লিখিত চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একতরফাভাবে সুজানগর উপজেলা ও পৌর এবং সাঁথিয়া পৌর বিএনপির পকেট কমিটি করায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কিসের বিনিময়ে এই আহ্বায়ক কমিটি দিচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এসব কমিটিতে যেসব আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করেছে, তাদের মধ্যে কিছু কিছু সদস্য দীর্ঘ ১০-১২ বছর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিল না। তারা অতীতে যেমন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছে, বর্তমানেও চলছে। এমন ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা হলেও ত্যাগী ও পরীক্ষিত কোনো ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার যুগ্ম-আহ্বায়কদের সাথে আলোচনা করছে না।
এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবটুকু খুলে বলা সম্ভব নয়। তবে দল আমাদেরও যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি মনে করে এ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় দল আমাদের কাছে আমানতের মতো। কোনোভাবেই আমি সে আমানতের খেয়ানত হতে দেব না। দলে সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছি। সে অধিকার আমাদের আছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, হ্যাঁ, আমিও ফেসবুকে চিঠিটি দেখেছি। তাদের অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে বলতে পারেন, অফিসে এসে বলতে পারেন। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারেন না। এটা দিয়ে তারা মহা অন্যায় করেছে। গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছে। সাধারণত কোনো কমিটি করতে গেলে আহ্বায়ক-সদস্য সচিবই ঠিক করে, তারপরও আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিভিন্ন কমিটি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব কমিটি দিয়েছি, তারা বলুক যে ওই সব কমিটির অমুক অমুক অযোগ্য আর যোগ্যদের নাম বলুক। আমরা বিষয়টি দেখবো। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারে না। তাদের অভিযোগগুলো ঠিক না। যাদের জ্ঞানের অভাব আছে, তারা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারে। এই সময়ে এটা দেয়া ঠিক হয়নি।
চলতি বছরের ২২ আগস্ট সংক্ষিপ্ত থেকে পরিধি বাড়িয়ে পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল দুই বছরের মাথায় পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উল্লেখ্য, পাবনা জেলা বিএনপির বহুল আলোচিত-সমালোচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুলাইয়ে ৪৩ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের ওই কমিটিও জেলার নেতাকর্মীদের আলোর মুখ দেখাতে পারেনি।
তিন মাসের মধ্যে উপজেলা, থানা ও পৌর এলাকায় প্রতিনিধিদের সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পেরিয়ে দুই বছরেও কোনো উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি দিতে পারেননি তারা। পুনর্গঠন তো দূরের কথা, আগের মতোই কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে জেলা আহ্বায়ক কমিটি। দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারছে না বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিও। ফলে নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে আগের মতোই নিজেদের গোছাতে পারেনি পাবনা জেলা বিএনপি। নেতাকর্মীদের মাঝেও নেমে এসেছে হতাশা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই