ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর কসকা থেকে গত তিন দিন আগে গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া অজ্ঞাত লাশের পরিচয় মেলার পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক পিকআপ হেলপার শরীফুল ইসলাম। মঙ্গলবার ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমা প্রেস ব্রিফিংয়ে মাধ্যমে জানান, পিকআপ বোঝাই গার্মেন্টসের মালামাল লুট করতে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি চালক আবদুল খালেককে (৪৫) হত্যা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়ার কসকা এলাকায় ঝোঁপে লাশ ফেলে দেয় সহকারী শরীফুল ইসলাম। নিহত চালকের সহকারী (হেলপার) আদালতে এ তথ্য জানান। এ সময় ফেনী মডেল থানার ওসি মো: নিজাম উদ্দিন, সদর সার্কেলের ওসি শাহাদাৎ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গ্রেফতার হওয়া পিকআপের হেলপার শরীফুল ইসলাম গতকাল সোমবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শরীফুলের দেয়া তথ্যমতে পুলিশ জানান, নওগাঁ জেলার বাসিন্দা আবদুল খালেক (৪৫) পেশায় পিকআপচালক। একই জেলার বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম নামে এক যুবক গত কয়েকমাস যাবত তার সহকারি হিসেবে কাজ করে। গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর থেকে গার্মেন্টসের যন্ত্রপাতি নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে হাতিরঝিল থেকে দুলাভাই পরিচয় দিয়ে ফিরোজ নামে এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন শরীফ। মেঘনা টোলপ্লাজার আগে বিরতির সময় একটি দোকানে চা খাওয়া অবস্থায় আরো দুইজন পিকআপের পেছনে ত্রিপলের নিচে ঢুকে পড়েন। সেখানে একটি ড্রিংকসের মধ্যে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে দেয়। এরপর খালেক অচেতন হয়ে পড়লে শরীফ পিকআপ চালাতে থাকে। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শরীফ ও গাড়ির পেছনে থাকা দুইজন খালেককে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। এরপর লেমুয়ার কসকা এলাকায় নির্জন স্থানে ঝোঁপের মধ্যে লাশ গুমের উদ্দেশে ফেলে যান তারা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বোগদাদিয়া ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, তারা পিকআপটি কসকা থেকে ইউটার্ন করে ঢাকার দিকে চলে যায়। কুমিল্লা বিশ্বরোড পৌঁছলে শরীফ নেমে যান। অপর দুইজন পিকআপটি নিয়ে ঢাকার গাবতলী গেলে সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য সিগন্যাল দিয়ে থামান। এরপর তারা বাসা থেকে কাগজপত্র আনার কথা বলে পালিয়ে যান।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় শরীফ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় খালেকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। বিষয়টি জানাজানির পর শরীফকে গ্রেফতার করা হলে ঘটনার পুরো রহস্য বেরিয়ে আসে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন জানান, মামলাটির রহস্য উদঘাটনে পুলিশ নানাভাবে চেষ্টা চালায়। তথ্য যাচাই-বাছাই এমনকি অপরাপর জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত; গত শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের কসকা নামকস্থানে ঝোপের মধ্য থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/এএ