গাজীপুরে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেলেন ১২৯ জন। রবিবার ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এ উপলক্ষে জেলা পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, মো: রবিউল ইসলাম, ডা. নন্দিতা মালাকার উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, গাজীপুরে কোন প্রকার তদবির ও ঘুষ ছাড়াই পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেলেন ১২৯ জন। তারা আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও নিজেদের যোগ্যতার মাধ্যমে শুধুমাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকা দিয়ে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য।গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, ‘চাকুরি নয়, সেবা’ এই স্লোগান সামনে রেখে এ বছর ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষা প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি টিআরসি পদে গাজীপুর জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।’
তিনি আরো জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে টিআরসি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে গাজীপুর জেলায় সাধারণ ও বিভিন্ন কোটায় মোট ৩ হাজার ৪৮৫ জন (নারী ও পুরুষ) চাকুরী প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিনের ইভেন্টে ‘শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণ’ পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৯৪ জন, ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিনের ইভেন্টে দৌড়, পুশআপ, লং জাম্প এবং হাই জাম্পসহ ফিজিক্যাল শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় ১ হাজার ২০১ জন এবং ১০ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দিনের ইভেন্টে (দৌড়, ড্র্যাগিং এবং রোপ ক্লাইম্বিং) পরীক্ষায় ৯২৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে এসব উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ৯১৭ জন প্রার্থী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় ৩৮৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তারা ২৩ ফেব্রুয়ারি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সর্বমোট ১২৯ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত ১২৯ জন টিআরসি’র মধ্যে ১১০ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।
যুথি আক্তার চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা জানি সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই সরকারি চাকরি পাওয়া। সরকারি চাকুরি পেতে তদবির বা ঘুষের প্রয়োজন হয়। অথচ আমার বা আমার পরিবারের তা ছিল না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও ওই প্রবাদকে মিথ্যে প্রমাণিত করে শুধুমাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকা জমা দিয়ে আমি সোনার হরিণ নামের সরকারি চাকুরি পেয়েছি।’
অনুষ্ঠানে যুথির মা সাথী আক্তার বলেন, ‘গাজীপুরের মারিয়ালী এলাকায় স্বামী সন্তানসহ বসবাস করেন। সংসারের অভাব ঘোঁচাতে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ (গৃহকর্মী) করেন। একাজে প্রতিমাসে তিনি পান ৬-৭ হাজার টাকা। তার স্বামী অটোরিক্সা চালক। এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের আয় রোজগারে চলে সংসার ও সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ। ওই দম্পতির মেয়ে যুথি আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারেনি কলেজে। তাই সংসারের অভাব ঘোচাতে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকুরি জন্য আবেদন করে যুথি। কোন প্রকার তদবির ও ঘুষ ছাড়াই যুথি পেয়ে যায় ওই চাকুরি।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল