৬ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৫৭

কারাগারে যাওয়া যুব গেমসের পাঁচ খেলোয়াড়ের জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

কারাগারে যাওয়া যুব গেমসের পাঁচ খেলোয়াড়ের জামিন
শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসে অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গ্রেফতার হওয়া ১২ জনের মধ্যে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ পাঁচ খেলোয়াড়কে জামিন দিয়েছেন আদালত। 
 
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এ জামিন দেন। 
 
রবিবার ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে ট্রেনে একজন পুলিশ সদস্যকে মারপিটের অভিযোগে যুব গেমসে অংশ নেওয়া একদল খেলোয়াড়ের নামে ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১১ খেলোয়াড় ও তাদের কোচকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার রাত আটটার দিকে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে ছয় খেলোয়াড় ও কোচকে ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ খেলোয়াড়কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ তোলা হলে রাতে তাদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন জামিন পান। তাদের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম বলেন, রবিবার রাত হয়ে যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। সোমবার সকালে আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়। আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত প্রক্যেককে ৫০০ টাকায় মুচলেকায় তাদের পূর্ণাঙ্গ জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তারা একজন প্রবেশন কর্মকর্তার নজরদারিতেও থাকবেন বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন।
 
১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়ে। কারাগারে পাঠানো ৬ জন হলেন-আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার ওরফে পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।
 
সোমবার সকাল ১০টা থেকে আদালত চত্বরে ১১ জন খোলোয়াড়ের স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন। তারা কয়েকজন বলেন, তাদের ছেলেমেয়েদের খেলোয়াড় হিসেবে একটা ক্যারিয়ার আছে। ১৮ মার্চ তাদের ভারতে খেলা আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হলে তারা খেলতে যেতে পারবেন না। তাদের পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন খেলোয়াড় রিমি খানমের (১৯) মা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, যারা খেলতে গিয়েছিলেন সবাই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। গরিব বলেই তারা খেলতে গেছেন। যাতে খেলে একটা কিছু হতে পারেন। তিনি বলেন, তার মেয়ে রিমি খানম এবার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার পড়াশোনা আছে। ১৮ মার্চ  ভারতে খেলা আছে। তিনি বলেন, এই মামলা থাকলে তার মেয়ের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। পড়াশোনাটাও নষ্ট হবে।
 
রিমি খানম সেনাবাহিনীর হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। সে তিনজনকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন উল্লেখ করে ফিরোজা বেগম বলেন, ‘তার মেয়েসহ সবার পুরস্কারের টাকা ও মেডেল একটা ব্যাগে ছিল। সেই ব্যাগ হারিয়ে গেছে। ওরা খোঁজাখুঁজি করছিল। নামার সময় ওই পুলিশের সঙ্গে নাকি ধাক্কা লেগেছে। আমাদের ছেলে আলী আজম সঙ্গে সঙ্গে সরি বলেছে। তারপরও পুলিশ ওর কলার ধরে একটা চড় মেরেছে। তখন তার সঙ্গে আরও ছেলে ছিল। তারাও গেছে। নাকে একটু লাগলেই তো রক্ত বের হয়। সেটাই হয়েছে। এই নিয়ে মামলা করেছে।’
 
এই খেলোয়াড়রা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। মামলায় মো. রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কেও আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
 
রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুন্নবী অনু বলেন, বিষয়টি এতোদূর না নিয়ে খেলোয়াড়কের ক্যারিয়ার বিবেচনায় বিষয়টি রাতেই মীমাংসা করা যেতো। কিন্তু ঘটনাটিকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে বড় করা হয়েছে। এমনিতে মেয়েরা খেলায় আসতে চায় না। এমন ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ক্রীড়াঙ্গনে। তিনি ঘটনাটির তদন্তে কমিটি গঠনের দাবি জানান।  
 
রবিবার বিকালে গোলাম কিবরিয়া (৩০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মামলাটি করেন। গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত। মামলায় অভিযোগ করা হয়, স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে তাকে মারধর করে খেলোয়াড়দের দলটি। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা-পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তার স্ত্রী দাবি করেন, স্বামীকে মারধরের সময় তার গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে।
 
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর