গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত ও ছোট বড় পুকুর। সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষিদের। প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। তবে কত হাজার কোটি টাকা মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি জেলা মৎস্য বিভাগ।
এদিকে, পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ১০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তালা-কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট, বাড়ির আঙিনাসহ ঘর-বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ভুক্তভোগীরা।
এ ছাড়া কাজের জন্য গত চারদিনে বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বাইরে বের হতে না পেরে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষ। সব মিলিয়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরাবাসী।
খোঁজ-খবর নিয়ে ও সরেজমিন দেখা গেছে, টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মধুমল্লারডাঙ্গী, কামাননগর, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি, রসুলপুর, পলাশপোল, ইটাগাছা, কুখরালিসহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কলারোয় উপজেলার বিভিন্ন বিল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা, চোমরখালি, যুগীপুকুিরয়া, তৈইলকুপি, দলুয়া, আমতলারডাঙ্গী, বড়বিলা, পারকুমিরা, কাশিপুর ও ভারসাসহ শ্যামনগর উপজেলার নিম্ন অঞ্চলের মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা, ব্রন্মরাজপুর, বিনেরপোতা, গোপীনাথপুর, মাগুরা, খেজুরডাঙ্গা ও তালতলা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে বাড়ি-ঘরেও পানি উঠে গেছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষ। ফসলের মাঠ ও পুকুর পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে জেলা মৎস্য অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টির পানিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার চিংড়ি ও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে পরিসংখ্যানের কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ মিলিমিটার এবং সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, নিম্নচাপের কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন সকল নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই