স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগে নিজবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে প্রথমে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয় এক কিশোরকে। কয়েকদিন পর ফের ওই কিশোরকে ধরে নিয়ে এসে প্রকাশ্যে নির্যাতন চালিয়ে লাঠি ভেঙে ফেলেন এক প্রবাসী।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের চড়াইকোল এবং কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় কয়েক দফা এমন মারধরের ঘটনা ঘটে। সোমবার সকাল থেকে ওই কিশোরকে মারপিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মারধরের শিকার ওই কিশোরের নাম সজিব হোসেন (১৫)। সে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকার মৃত আবুল কালাম আজাদের ছেলে। আর অভিযুক্ত প্রবাসীর নাম মো. মাজেদ প্রামাণিক। তিনি উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের চড়াইকোল বোর্ড অফিস এলাকার নিজাম প্রামাণিকের ছেলে এবং সৌদিআরব প্রবাসী। তারা সম্পর্কে ফুফা ও ভাতিজা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাছের ডাল বা লাঠি দিয়ে সজিবকে পেটাচ্ছেন প্রবাসী মাজেদ। পিটানোর একপর্যায়ে লাঠি ভেঙে গেলে একটি ইট দিয়ে মারার পায়তারা করছেন। সেখানে সজিবের মাসহ অন্যান্যরা রয়েছেন। এসময় ছেলেকে মারপিট করতে দেখে মা আফরোজা আহাজারি করছেন।
জানা গেছে, প্রায় ১৫দিন আগে প্রবাসী মাজেদের ছেলের সুন্নতে খাৎনা অনুষ্ঠান ছিল। দাওয়াত পেয়ে সজিব মাজেদের বাড়িতে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানে মাজেদের স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় নিজবাড়ি থেকে সজিবকে তুলে নিয়ে যায় মাজেদ ও তার লোকজন। তাকে মাজেদের বাড়িতে আটকে রেখে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনার পরদিন সজিবকে ছেড়ে দেন তারা। এরপর ২৩ আগস্ট সকালে সজিবের বাড়িতে গিয়ে ফের তাকে লাঠি দিয়ে ব্যাপক পিটিয়ে লাঠি ভেঙে ফেলেন মাজেদ। এরপর থেকে সজিব ও তার পরিবারকে কয়েক দফা মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালাতে থাকেন প্রভাবশালী মাজেদ। অবশেষে মাজেদের হাত থেকে রেহাই পেতে ২৯ আগস্ট কুমারখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন সজিবের মা আফরোজা খাতুন।
আজ সোমবার সকালে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সজিবের মা আফরোজা খাতুন বলেন, মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলেকে মাজেদ ও তার লোকজন কয়েক দফা মারধর করেছে। আমাকেও গলা চেপে ধরে মারেছে। আমি সঠিক বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এখন অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের ধারে কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে প্রবাসী মাজেদের আলিসান বাড়ি। কয়েকবার কলিং বেল বাজালেও কেউ সাড়া দেন। মাজেদের মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মাজেদের ভাই মাসুম প্রামাণিক বলেন, সজিব অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ভাবির ১০-১২ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি করেছে। কয়েকবার স্বীকার করেও ফেরত দিচ্ছে না। এসব নিয়ে ঝামেলায় আছি। মারধরের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উভয়পক্ষই আত্মীয়। নিজেরা বসাবসি করে সমাধান করা হবে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, এক কিশোরকে মারধরের ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোরের মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল
