আলু আবাদ করে এবার কৃষক, ব্যবসায়ীদের লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে অনেকের কোমড় ভেঙে গেছে। অনেকে লোকসানের ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে আলুর আবাদ হয়েছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৭৩৯ হেক্টরে। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এবার কৃষি অফিস আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এক লাখ ১ হাজার ৭০০ হেক্টরে।
কৃষি অফিস ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর নগরীর চিলমন এলাকার আলু চাষি গৌরাঙ্গ রায় ১২ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। হিমাগারে রাখতে না পেরে বাসায় আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। বাজারে দাম কম থাকায় তিনি আড়াই লাখ টাকা লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই তিনি এবার কম পরিমান জমিতে আলু আবাদ করবেন। একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম আলু আবাদ করে পুঁজি হারিয়েছেন। তিনিও এবার সামান্য পরিমান জমিতে আলুর আবাদ করছেন। তাদের মত অনেক কৃষক গত বছরের চেয়ে কম পরিমান জমিতে আলুর আবাদ করবেন।
কৃষকরা জানান, এক দোন (২২ শতক) জমিতে আলুর বীজ লাগে ২৪ হাজার টাকার। রোপন, সার, উত্তোলন ইত্যাদির খরচ পরে ১৯ হাজার টাকা। এক দোন জমিতে মোট খরচ হয় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি। সেই হিসেবে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। হিমাগারে কেজি প্রতি আরও যোগ হবে ৮ টাকা। সব মিলিয়ে দেখা গেছে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২৬/২৮ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতিকেজি আলুতে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১৫/২০ টাকায় আলু বিক্রি হলেও পাইকারি এবং হিমাগার গেটে দাম এর অর্ধেক।
এদিকে সরকার আলু চাষিদের উৎপাদন খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হিমাগারের গেটে আলুর বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ২২ টাকা নির্ধারণ করে ক্রয় করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ঘোষণা অনুয়ায়ি ২২ টাকা কেজি দরে সরকারিভাবে কোন আলু কেনা হয়নি। ফলে কৃষকদের লোকসান কমানো সম্ভব হয়নি। অপরদিকে নভেম্বরের শেষের দিকে আগাম নতুন আলু বাজারে উঠবে। তখন পুরাতন আলুর চাহিদা অনেক কমে যাবে। এসময় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলনে আগ্রহ দেখাবে না। ফলে বিপাকে পড়বেন হিমাগার মালিকরা। এমনটা শঙ্কা করা হচ্ছে।
কৃষকদের দাবি সরকারের গৃহীত প্রদক্ষেপ অনুয়ায়ি আলু বিক্রি হলে ব্যবসায়ী. কৃষক, এবং হিমাগার মালিকদের লোকসানের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্তপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় সার-কীটনাশকসহ বিভিন্ন খাতে বেশি খরচ করায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্তমান বাজার দর হিসেবে কৃষকরা মোটা অংকের লোকসান গুণছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএম