বাবাকে হাট থেকে একটা সুন্দর ছাগল কিনে আনতে দেখে ছোট্ট আলিফ জিজ্ঞাসা করল,
: ‘বাবা, বাবা, ও বাবা; হঠাৎ করে ছাগল কিনে আনলেন কেন?’
-ছাগল কিনে আনার প্রধান কারণ হলো আগামী সপ্তাহে কোরবানির ঈদ।
: কোরবানির ঈদ কী?
-কোরবানির ঈদ হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের আরেকটি বড় ধর্মীয় উৎসব ও ইবাদত, যা প্রতি বছর আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়।
: জিলহজ কী?
-জিলহজ একটি আরবি মাসের নাম। আমাদের যেমন বাংলায় মাসের নাম বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ আছে, তেমন।
: ওই দিন কী করতে হয় বাবা?
-ওই দিন সকালে নতুন নতুন পোশাক পরে, সুগন্ধি মেখে সবাই মিলে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়তে হয়। নামাজ পড়ে এসে কোরবানি দিতে হয়।
: কোরবানি কীভাবে দিতে হয় বাবা?
এভাবে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে আলিফ। তার বয়স এখন তিন বছর। কিছুদিন আগে কথা বলতে শিখেছে। গত বছর কোরবানির সময় সে এসব বুঝতো না তাই এবার তার অনেক কিছু জানার প্রশ্ন। আলিফের প্রশ্নে বাবা বিরক্ত না হয়ে তাকে সব কিছু সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলছিলেন। কিন্তু কোরবানি কীভাবে দিতে হয় তার উত্তর না দিয়ে তিনি সরজমিনে ছেলেকে নিয়ে বোঝানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আলিফের মা পশু কোরবানির সময় ভয় পাবে বলে আলিফকে না নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন।
ঈদের দিন সকালে বাবা পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আলিফকে নিয়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে গেলেন। যাওয়ার সময় কোরবানি কীভাবে এসেছে, কবে এসেছে, কেন পালন করতে হয় তা আলিফকে সুন্দরভাবে বোঝাতে বোঝাতে গেলেন তিনি। ঈদগাহে এত মানুষকে একসঙ্গে সমাবেত হতে দেখে আলিফের মনে আরও প্রশ্ন জাগল। সে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল-
: এত মানুষ এখানে কী করছে বাবা?
-সবাই আমাদের মতো ঈদের নামাজ পড়তে এসেছে।
: ঈদের নামাজ কেন পড়তে হয়?
-আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
: সন্তুষ্টি কী বাবা?
-সন্তুষ্টি হলো কারও মনের মতো কিছু করে তাকে খুশি করা।
এভাবে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে চলতে এক সময় নামাজের সময় হয়ে গেল। বাবা আলিফকে পাশে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। এই সময় সে বাবার নির্দেশ মোতাবেক চুপ করে দাঁড়িয়েই রইল, কোনো লাফালাফি এবং প্রশ্ন করল না। নামাজ শেষে সবাইকে কোলাকুলি করতে দেখে তার মনে আবার প্রশ্ন জাগল-
: বাবা, সবাই এগুলো কী করছেন?
-একে কোলাকুলি বলে বাবা।
: কোলাকুলি কী?
-কোলাকুলি হলো সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করা, বুকে টেনে নেওয়া।
বাবার কথা শুনে আলিফ প্রথমে বাবার কোলে উঠে বাবার সঙ্গে কোলাকুলি করল। পরে দাদা, নানা ও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
বাড়িতে এসে এবার কোরবানি দেওয়ার পালা। কোরবানির দেওয়ার পরপরই বাবা আলিফকে নিয়ে গেলেন সেখানে। আগে নিয়ে গেলে ভয় পেতে পারে তাই তার মায়ের নির্দেশ মোতাবেক তাকে পরে নিয়ে যাওয়া হলো।
ভালোভাবে তাকে বোঝালেন কীভাবে কোরবানি দিতে হয়। কোরবানির দেওয়ার পর কী করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কোরবানির পর ছোট্ট আলিফ বাবার সঙ্গে মজার মজার খাবার খেয়ে অতি আনন্দে কোরবানির মাংস বণ্টনে ব্যস্ত হয়ে গেল।