এক যে ছিল টুকটুকি। ছোট্ট এক সোনামণি। সে তার মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে থাকত। তাদের গ্রামের নাম পাঁচলীপাড়া। সবুজ মাঠ আর পাখির গুঞ্জনের জন্য গ্রামটি খুব বিখ্যাত। টুকটুকির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল তার লাল রঙের ছোট্ট ছাতা। সে যেখানেই যেত ছাতাটি তার হাতেই থাকতো।
একদিন বিকাল বেলায় সে মাঠে খেলতে খেলতে হঠাৎ বুনো জঙ্গলের ধারে চলে আসে। সেখানে সে হঠাৎ একটা অদ্ভুত পাখি দেখতে পেল। পাখিটা খুব সুন্দর। গায়ে সাত রঙের পালক! টুকটুকিকে অবাক করে দিয়ে পাখিটা বলল, ‘হ্যালো টুকটুকি! আমি হলাম জাদুর পাখি। তুমি চাইলে তোমার তিনটা ইচ্ছা পূরণ করে দিতে পারব!’
জাদুর পাখির কথা শোনে টুকটুকি তো খুশিতে বাকবাকুম! সে বলল, তুমি সত্যি কথা বলছ তো জাদুর পাখি? জাদুর পাখি বলল, আমি কোনো দিন মিথ্যা বলি না। ঠিক আছে তুমি তোমার ইচ্ছার কথা আমাকে বলো। তাহলেই বুঝতে পারবে।
টুকটুকি বলল, আমার প্রথম ইচ্ছা হলো- আমাদের স্কুলটি ভাঙাচোরা। আমি চাই স্কুলটি যেন রাতারাতি একটি বিল্ডিং হয়ে যায়।
জাদুর পাখি ডানা ঝাপটিয়ে বলল, ঠিক আছে। তোমার প্রথম ইচ্ছা পূরণ করা হলো। এবার দ্বিতীয় ইচ্ছের কথা বলো।
টুকটুকি বলল, দ্বিতীয় ইচ্ছা হলো-আমার স্কুলের বান্ধবীরা একেকজন একেকরকম জামা পরে আসে। এজন্য দেখতে ভালো লাগে না। আমি চাই, সবার পোশাক যেন একই রকম রঙিন হয়ে যায়।
জাদুর পাখি বলল, ঠিক আছে। তোমার দ্বিতীয় ইচ্ছা পূরণ করা হলো। এবার শেষ ইচ্ছাটা বলো।
টুকটুকি একটু ভেবে নিয়ে
বলল, ‘আমার স্কুলের ছেলেমেয়েরা সবাই একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করে। আমি চাই, সবাই যেন একে অপরকে ভালোবাসে। খারাপ ব্যবহার না করে।’
টুকটুকির কথা শোনে জাদুর পাখিটি মুচকি হেসে বলল, ঠিক আছে- তোমার শেষ ইচ্ছাটিও পূরণ করা হলো!’
তারপর পাখিটা আকাশে ওড়ে গেল। টুকটুকিও তাদের বাড়িতে ফিরে এলো। কিন্তু জাদুর পাখির সঙ্গে দেখার বিষয়টা কাউকে বলল না। পরদিন সকালে সে অনেক আশা এবং উত্তেজনা নিয়ে স্কুলে গেল। তারপর যা দেখতে পেল, তাতে সে খুবই খুশি হলো। তাদের গ্রামের স্কুলটি একটি তিনতলা বিল্ডিং হয়ে গেছে। তার সব বান্ধবীর গায়ে একই রকম রঙিন পোশাক। সবাই হেসে হেসে খেলাধুলা করছে। বড়রাও একে অপরের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। এসব দেখে টুকটুকি বুঝল- সত্যিকারের জাদু আসলে ভালোবাসা, সদিচ্ছা আর মন থেকে চাওয়া।