অনেক অনেক দিন আগে, ইউরোপের উত্তর প্রান্তে বরফে ঢাকা এক রাজ্য ছিল- নর্দল্যান্ড। সেখানে শীতের সময় ঘন বরফ পড়ত, আর তুষার ঝড়ে ঢেকে যেত সবকিছু। সেই রাজ্যে বাস করত এক ভয়ংকর ড্রাগন, যার নাম ছিল আইসথর। সে পাহাড়ের চূড়ায় একটি বরফের গুহায় বাস করত এবং প্রতি শীতে নেমে এসে গ্রামের খাবার, গবাদি পশু ও মাঝে মাঝে মানুষও ধরে নিয়ে যেত। রাজ্যজুড়ে ভয়ে ভয়ে বেঁচে ছিল সবাই। রাজা বহু সাহসী যোদ্ধাকে পাঠিয়েছিলেন ড্রাগনকে মারার জন্য, কিন্তু কেউ ফিরেনি। ঠিক তখনই রাজ্যে জন্ম নেয় এক সাধারণ কাঠুরের মেয়ে- এলিনা। সে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখত, একদিন সে রাজ্যকে ড্রাগনের হাত থেকে বাঁচাবে। এক শীতে, ড্রাগন রাজপ্রাসাদের কাছে চলে আসে, এলিনা সিদ্ধান্ত নেয় যে এবার সে-ই যাবে ড্রাগনের গুহায়। সে তার দাদার বানানো জাদুকরী লণ্ঠন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এই লণ্ঠন ঠান্ডা জমিয়ে ফেলার শক্তি নষ্ট করে দিতে পারত। তিন দিন তিন রাত পাহাড় বেয়ে উঠে সে পৌঁছায় ড্রাগনের গুহায়। ড্রাগন আইসথর তখন ঘুমাচ্ছিল। এলিনা লণ্ঠন জ্বালিয়ে দেয়। চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ে, আর ড্রাগনের বরফ-হৃদয় গলে যেতে থাকে। হঠাৎ সে জেগে ওঠে, কিন্তু এলিনার চোখে ছিল ভয়হীন সাহস। সে বলে, ‘তুমি যদি রাজ্যকে শান্তিতে থাকতে দাও, আমি তোমার বন্ধুত্ব চাই।’ আইসথর থমকে যায়। এত বছর পর কেউ তাকে ভয় না পেয়ে কথা বলল। তার মন গলে যায়, বরফের মতো। সে চুপচাপ গুহা ছেড়ে চলে যায় দূরের এক পর্বতে এবং আর কখনো ফিরে আসেনি। রাজা এলিনাকে রাজ্যের সাহসী রক্ষক উপাধি দেন। সেই থেকে প্রতি বছর শীত এলেও আর ড্রাগনের ভয় ছিল না। ছোট্ট এলিনা হয়ে ওঠে এক সত্যিকারের রূপকথার নায়িকা।
(ইউরোপীয় রূপকথার গল্প)