সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও ক্রমেই বেড়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই শহরের প্রধান দুই হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল এবং খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের লক্ষ্মণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩১২ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন।
আর এই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পিছনে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত না হওয়াকেই দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা হলে হয়তো ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তো না বলে মনে করছেন তারা।
তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে তাদের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতিও রয়েছে। শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল আপাতত ডেঙ্গু টেস্টিং কিটের সংখ্যা কম থাকলেও দুই একদিনের মধ্যে সেটার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাস থেকেই নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। গত মাসে তেমন একটা ডেঙ্গুর তেমন একটা প্রভাব ছিলো না। কিন্তু দিন যাওয়ার সাথে এই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে গত ১০ দিন ধরে এটা যেন বেশ আশঙ্কাজনকহারেই বাড়তে শুরু করছে।
শহরের প্রধান দুই হাসপাতালের মধ্যে খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। সেই সাথে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০ জন এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সাথে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ১০ জন ভর্তি আছেন। পাশাপাশি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জন এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফরহাদ নামে একজন বলেন, হঠাৎ করেই শরীরে জ্বর আসে এবং বাড়তে থাকে। সেই সাথে ডেঙ্গু রোগের যতো লক্ষণ আছে সব দেখা দেয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে এসে পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে এবং ডাক্তার ভর্তি হই। দুইদিন ভর্তি থাকার পর এখন অনেকটাই সুস্থ। ডাক্তার হয়তো ছুটি দিয়ে দিবে।
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ রিনা আক্তার বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ নিয়ে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন আমরা তাদের ভর্তি নিচ্ছি। তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভিক্টোরিয়া হাসাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্যালাইনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে। কিট কিছুটা কম আছে। নতুন কিটের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে কিট চলে আসবে।
খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আবুল বাসার বলেন, আগের মাসগুলোতে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ খুবই কম ছিলো। এই মাস থেকে একটু বাড়তি রয়েছে। বৃষ্টির পরবর্তীতে জমানো পানিতে মশাগুলো ডিম পাড়ে। আমাদের সচেতন হতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে আমরা সেই সচেতনতা দেখছি না। এখন পর্যন্ত মশক নিধন কোনো অভিযান দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, মশক নিধন অভিযান পরিচালনা না করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যাবে না। ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেটা যেন আমাদের নারায়ণগঞ্জ না হয়। মশা যেন বংশবিস্তার করতে না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নারায়ণঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, তুলনামূলকভাবে নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। এখনও আমরা ওইরকম কোনো ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখছি না। এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে যেটুকু বাড়ছে সেটা মশক নিধন অভিযান না থাকার কারণে বাড়তে পারে। কারণ নারায়ণগঞ্জে মশক নিধন অভিযানগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন হয়তো সেই কাজগুলো করছে না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, মশক নিধন অভিযান হচ্ছে না এটা ঠিক না। আমরা নিয়মিত প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সচেতনতার অভাবে আমাদের উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল