বয়স বেড়ে যাওয়ার পরও অনেকের বুক সরু থাকে। পাঁজরের হাড় পরিপূর্ণরূপে বৃদ্ধি না পাওয়ায় এবং বুকের পেশি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়। এতে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়। ডাক্তারি বিজ্ঞানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শরীরের গঠন বাড়তে থাকে। এরপর আর বৃদ্ধি পায় না। এ জন্য অনেকেই শরীর গঠনের জন্য ডাক্তারি পরমার্শ ও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে যোগ ব্যায়ামে দারুণ এক কার্যকরী আসন রয়েছে, যার মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব। ধনুরাসন এমনই একটি আসন। এই আসনের ফলে বুকের পেশি ও পাঁজরের হাড় স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং সুগঠিত হয়। আসন অবস্থায় শরীরকে দেখতে অনেকটা ধনুকের মতো মনে হয় বলে এই আসনকে ধনুরাসন বলে।
ধনুরাসনের জন্য প্রথমেই সটান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এবার পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে পায়ের পাতা যতদূর সম্ভব পিঠের ওপর নিয়ে আসতে হবে। এবার হাত দুটি পেছন দিকে ঘুরিয়ে দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের ঠিক গোড়ালির ওপরে শক্ত করে ধরতে হবে এবং পা দুটি যতদূর সম্ভব মাথার দিকে টেনে আনতে হবে। বুক, হাঁটু ও ঊরু মেঝে থেকে উঠে আসবে এতে। শুধু পেট ও তলপেট মেঝেতে থাকবে। এবার উপরের দিকে তাকিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকতে হবে। এবার হাত-পা আলগা করে ধীরে ধীরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২-৩ বার করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। প্রয়োজন মতো শবাসনে বিশ্রাম নেওয়া যায়।
ধনুরাসন নিয়মিত করতে পারলে বুকের পেশি ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধি হয় এবং বুক সুগঠিত হয়। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তলপেটের ওপর দেহের সব ভার পড়ে বলে ওই অঞ্চলের পেশি, স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় থাকে এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহাদন্ত্র, প্লিহা, যকৃত খুব ভালো কাজ করে। যাদের বুক বয়স অনুযায়ী সরু ও অপরিণত তাদের এই আসনটি অবশ্যই করা উচিত। এ ছাড়া এই আসন নিয়মিত করার ফলে মেরুদণ্ডের হাড়ের জোর নমনীয় হয়। মেরুদণ্ড সংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও তার পাশের পেশি সতেজ ও সক্রিয় রাখে। আসনটি নিয়মিত অভ্যাসে দেহের মধ্য ভাগের অপ্রয়োজনীয় মেদ দূর হয়, মনের চঞ্চলতা দূর করে এবং ধৈর্য বৃদ্ধি পায়। ধনুরাসনের সঙ্গে পদ-হস্তাসন ও শশঙ্গাসন অভ্যাস রাখলে কোনো দিন লাম্বার স্পন্ডিলোসিস বা স্লিপড ডিস্ক জাতীয় কোনো রোগ হতে পারে না। তবে যাদের হৃদযন্ত্রে বা গলদেশের ভেতরে কোনো রোগ আছে, নিরাময়ের আগে এই আসন না করাই শ্রেয়।