রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
ধর্ম

অপরের জানমালের হেফাজত করতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসলাম অন্য মানুষের জানমালের হেফাজত করাকে কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। যে কারণে ইসলামী সমাজে একে অন্যকে ভাই হিসেবে ভাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্য মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়। জাহেলিয়া যুগে জোর যার মুল্লুক তার সামাজিক বিধান হিসেবে বিবেচিত হতো। ইসলাম সে বিধানকে নাকচ করে দিয়েছে। অপরের সম্পদ বা যে সম্পদে নিজের হক নেই তা ভোগ ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলামের এ অবস্থান সামাজিক শান্তি ও ঐক্যের জন্য সহায়ক বলে বিবেচিত হয়।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : আমি শুনেছি রসুল (সা.) বলেছেন : 'যে লোক নিজের নয় জেনেও কারও সম্পদ আত্মসাতের জন্য কসম করে, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহকে তার ওপর রাগান্বিত অবস্থায় দেখতে পাবে।' অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি পাঠ করলেন, 'নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে...।' -বোখারি, মুসলিম।

হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন : আমরা রসুল (সা.)-এর দরবারে বসা ছিলাম। তিনি বললেন : 'যে লোক নিজের শপথ দ্বারা কোনো মুসলমানকে বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং জান্নাত হারাম করে দেন।' এক ব্যক্তি আরজ করল, ইয়া রসুলুল্লাহু! তা যদি খুবই সামান্য বিষয় হয়? তিনি বলেন, 'যদি একটা গাছের কাটা ডালও হয় তবুও। -মুসলিম, নাসায়ি।

হজরত আবুজর (রা.) বর্ণনা করেন : নবী পাক (সা.) বলেছেন, 'কেয়ামতের দিন তিনজনের সঙ্গে আল্লাহপাক কথা বলবেন না। তাদের পবিত্র (পাপমুক্ত) করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।' এ কথা তিনি তিন বার বললেন। হজরত আবুজর (রা.) বললেন : 'ইয়া রসুলুল্লাহ! সেই চরম ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাগ্যাহত লোকগুলো কারা? রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : 'যে লোক পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরে, যে দান বা অনুগ্রহ করে পরে খোটা দিয়ে লজ্জা দেয় এবং যে অসত্য শপথ করে পণ্য দ্রব্য বিক্রি করে।'

-মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ।

রসুল (সা.) আরও বলেন : 'কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, আত্মহত্যা করা এবং অসত্য কসম খাওয়া।' -সহিহ বোখারি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন : 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ হস্তগত করার জন্য অসত্য কসম করে, আল্লাহর সাক্ষাতে সে আল্লাহকে রাগান্বিত অবস্থায় দেখবে।' -বোখারি ও মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি।

অসত্য শপথের মাধ্যমে মিথ্যা অনুমোদন করাকে শরিয়তের পরিভাষায় 'ইয়ামিনে গামুস' অর্থাৎ নিমজ্জিতকারী কসম বলা হয়। কারণ এ (মিথ্যা কসম) কসমকারীকে পাপকার্যে কারও মতে পরিণামে জাহান্নামে নিমজ্জিত করে ফেলে বিধায় এ নামকরণ করা হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের অপরের সম্পদ আত্মসাত করার পাপ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, আল-আমিন জামে মসজিদ, খুলনা।

 

 

সর্বশেষ খবর