রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

খাগড়াছড়ি হত্যাকাণ্ড

ঘাতক ট্রাক চালকের শাস্তি কাম্য

খাগড়াছড়িতে এক ধর্মীয় নেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় লাশ হয়েছেন আটজন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। পাহাড়ের ওপর বৌদ্ধবিহারের নিচে খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বেপরোয়া গতির ট্রাক চড়াও হলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘাতক ট্রাকচালক এবং ট্রাকটি আটক করেছে। দুর্ঘটনার সময় ড্রাইভার নয় হেলপার ট্রাকটি চালাচ্ছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে ট্রাক চড়াও হওয়ার এ ঘটনাকে নাশকতা বলে মনে করছেন না বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। এটি দুর্ঘটনা হলেও তা ঘটেছে চালকের বদলে হেলপার দিয়ে ট্রাক চালাবার কারণে। খাগড়াছড়ির হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা দেশের পরিবহন খাতের নৈরাজ্যেরই একটি অভিন্ন চিত্র। আমাদের দেশে যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের বদলে উেকাচই বেশি গুরুত্ব পায়। ফলে যেনতেনভাবে গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া ডাল-ভাতের মতোই সস্তা বিষয়। হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো এ দেশের পরিবহন ব্যবস্থার ঐতিহ্যের অংশ বলেও বিবেচিত। হেলপার দিয়ে ট্রাক তো বটেই যাত্রীদের জীবন জিম্মি করে বাস চালানোও হয় অহরহ। অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন গেলেও দোষী চালকদের শাস্তি পেতে হয় না বললেই চলে। দেশে প্রতিদিন ২০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ৬৪২ জন, আহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৮৫৫ জন। ২০১৬ সালে নিহত ও আহতের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৫ ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন। গত দুই বছরে প্রায় ১৫ হাজার জনের মৃত্যু হলেও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কোনো চালককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির ঘটেনি। পরিবহন মালিক ও চালকদের চাপে দুর্ঘটনাজনিত অপরাধে শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে তা এতটাই নমনীয় যে, তা বেপরোয়া চালকদের মধ্যে কোনো ভয় ঢুকাতে পারছে না। খাগড়াছড়িতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজনদের জন্য আমরা শোকানুভূতি জানাতে চাই। ঘাতক ট্রাকের বেপরোয়া চালকের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসন সচেষ্ট হবে, এমনটিও কাঙ্ক্ষিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর