জঙ্গি তত্পরতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। তারপরও সন্ত্রাসের বরপুত্রদের কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। একের পর এক অভিযান চালিয়ে জঙ্গি নামের বিষধর সাপের কোমর ভেঙে দেওয়া সম্ভব হলেও বিষদাঁত থেকে যাওয়ায় তারা সুযোগ পেলেই ছোবল মারার চেষ্টা করছে। টঙ্গীতে নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার ১৩ ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লার চান্দিনায় গ্রেনেড ও ছুরিসহ দুই জঙ্গি আটকের ঘটনা প্রমাণ করেছে একের পর এক সফল অভিযান সত্ত্বেও জঙ্গিদের তত্পরতা চালানোর ক্ষমতা নিঃশেষ করা সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে তারা জঙ্গি নির্মূলের কোনো দাবি করেননি। শিকড় উপড়ে ফেলার সাফল্য অর্জিত হয়েছে এমন কথাও বলেননি। বলেছেন জঙ্গিদের তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। কাজেই তারা মাঝে মাঝে ফোঁস দেওয়ার চেষ্টা করবেই এবং বিষদাঁত না ভাঙা পর্যন্ত এটা চলতে থাকবেই। এ বক্তব্যের যথার্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ঝুঁকি সত্ত্বেও একজন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির মধ্যেও জঙ্গি তত্পরতা চালিয়ে যাওয়ার ঘটনায়ও বিষয়টি অনুধাবন করা যায়। আমরা এ কলামে বার বার বলেছি জঙ্গিবাদ দমনে শুধু শক্তি প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, তারা যেহেতু অপকর্ম চালাতে পবিত্র ইসলামের অপব্যাখ্যা করছে, সেহেতু এরা যে পবিত্র ধর্মের অনুসারী নয়, তা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। তাত্ত্বিকভাবে এ হুমকির মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে। জঙ্গিবাদের অর্থায়ন বন্ধেও নিতে হবে উদ্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। নির্দেশনাটি গুরুত্বের দাবিদার হলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারির অভাব রয়েছে। জঙ্গিবাদ এ মুহূর্তে মানব সভ্যতার জন্য এক বড় হুমকি। জঙ্গিবাদের অপনায়করা জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটিয়ে সভ্যতার কণ্ঠনালি টিপে ধরতে চায়। এই নোংরা ভূত ইতিমধ্যে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া এবং পাকিস্তানসহ আরও বেশকিছু দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে ফেলেছে। গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত জঙ্গিবাদকে ঠেকাতে এর অর্থায়ন বন্ধে আরও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে।